কাবুলের ‘দুয়ারে’ তালেবান, আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়ছে মানুষ
আফগানিস্তানে উগ্রপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান বাহিনী ধারণার চেয়ে দ্রুত গতিতে রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল তালেবানের দখলে চলে গেছে। সর্বশেষ আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও হেরাত দখল করে নিয়েছে তালেবান। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বলছে, এ দুটি বড় শহর দখলকে তালেবানের সামরিক বিজয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এই অবস্থার মধ্যে হাজার হাজার আফগান নাগরিক নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে জীবন বাঁচাতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত অনেক বেসামরিক মানুষ সামরিক আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। তালেবানের দখলে চলে যাওয়া প্রদেশগুলো থেকে মানুষ রাজধানী কাবুলের দিকে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যাচ্ছে। কারণ, কাবুলই এখন সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এই অবস্থার মধ্যে জাতিসংঘ আফগানিস্তানের প্রতিবেশীদের সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, খাদ্য মজুদের অবস্থা ভয়াবহ। দেশটিতে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এদিকে, আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিক এবং মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তিন হাজার সেনা পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ওই সৈন্যরা কাবুল বিমানবন্দরে মোতায়েন থাকেবে এবং বিশেষ বিমানে করে মার্কিন নাগরিক এবং কূটনীতিকদের ফিরে আনার কাজে সাহায্য করবে।
এর বাইরে আরও অতিরিক্ত চার হাজার মার্কিন মেরিন সেনা ওই অঞ্চলে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছি পেন্টাগন। পরিস্থিতি বেগতিক হলে তারা দ্রুত তারা আফগানিস্তানে যেতে পারে।
এদিকে ব্রিটেনও জানিয়েছে, কাবুলে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মী এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনায় সাহায্য করতে ৬০০ সৈন্য কাবুলে পাঠানো হচ্ছে।
গত প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। জো বাইডেনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে দ্রুত তালেবানের উত্থান ঘটতে শুরু করে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যে তালেবান কাবুল দখল করতে পারে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের বেশির ভাগ জায়গায় শাসন পরিচালনাকারী তালেবানের ক্ষিপ্র গতিতে অগ্রসর হওয়া দেখে আফগান সরকার ও তার মিত্ররা হতবাক হয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ৯০ দিনের মধ্যে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নিতে পারে। এর মধ্যেই আজ গজনি ও হেরাতের দখলে নেওয়ার খবর এলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তা জানান, তালেবান বর্তমানে আফগানিস্তানের ৬৫ শতাংশ দখলে নিয়ে ফেলেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত এক মাসের সংঘাতে আফগানিস্তানে এক হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে অন্তত চার হাজার ৪২ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।