ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা ‘সঠিক’ কিন্তু ‘বিপজ্জনক’ : টুইটারপ্রধান
মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে সহিংসতার পর বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাইক্রোব্লগিং সাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ইনকরপোরেটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডরসির মতে, ট্রাম্পকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে কাজটি ‘বিপজ্জনক’ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলেও মনে করেন টুইটারপ্রধান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিস্কো ভিত্তিক টুইটার কোম্পানি গত সপ্তাহে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফলোয়ার ছিল আট কোটি ৮০ লাখ। টুইটারের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট খোলা থাকলে তাঁর সমর্থকেরা ফের সহিংসতা ছড়াতে পারে। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির নেতারা টুইটারের সমালোচনা করে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও বলেছিলেন, কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হবে কি না, তা ঠিক করতে পারেন কেবল আইনপ্রণেতারা, কোনো বেসরকারি সংস্থা তা ঠিক করতে পারে না।
টুইটারপ্রধান ডরসি বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, তা নিয়ে আমি খুব গর্ববোধ করছি না বা বিষয়টি উদযাপন করছি না। কিন্তু, অনলাইনে কেউ যদি হিংসাত্মক ভাষণ দেন, তা থেকে অফলাইনেও বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। সে কথা ভেবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ডরসি আরো বলেন, ‘আমরা সুস্থ আলোচনার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে পারিনি। তাই ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করতে হয়েছে।’
মার্কিন কংগ্রেসের হাউসে গত বুধবার দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুবার অভিশংসিত হননি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভিশংসন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের উসকানিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে চড়াও হয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ট্রাম্প-সমর্থকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন। এরপরই ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রস্তাব জমা পড়ে মার্কিন কংগ্রেসে।
ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সমর্থন চেয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা। পেন্সকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর আওতায় ট্রাম্পকে অপসারণের প্রস্তাব জমা দিতে। কিন্তু পেন্স বেঁকে বসেন। ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে তিনি রাজি নন। ২৫তম সংশোদনী খারিজ করে দিয়েছেন পেন্স। ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে অভিশংসন করার এই সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তবে ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়ে অন্যায়ভাবে প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন ট্রাম্প। তাই এই অভিশংসন দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।’
গত ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনের বিজয় কংগ্রেসে অনুমোদনের দিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকেরা। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সেদিন ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।