নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে চলছে তীব্র লড়াই, ক্ষতিগ্রস্ত বড় শহরগুলো

আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজায় আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলার পর নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের লড়াই ও উত্তেজনা আরো তীব্র হয়েছে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাকারি হাসানোভ গতকাল রোববার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানান, তাঁর দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর গানজায় আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে। গানজা শহরটি নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আর্মেনিয়ার এমন ‘স্পষ্ট উসকানি’ দুদেশের মধ্যে সংকট আরো বাড়াচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গানজায় হামলায় একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
এর আগে আজারবাইজানের বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের রাজধানী স্টেপানাকার্টে একটানা গোলাবর্ষণ করে।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজানের হলেও, তা জাতিগত আর্মেনিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে। বিতর্কিত এই অঞ্চলটি নিয়ে দুদেশের মধ্যে গত বিশ বছরে এবারের সংঘাত সবচেয়ে গুরুতর।
নাগর্নো-কারাবাখের স্বঘোষিত কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তাদের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ করার পর তারা আজারবাইজানের গানজার সামরিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। তবে সেখানে কোনো সেনা সদস্য হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে আজারবাইজান।
গানজা আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার মানুষ এ শহরের বাসিন্দা।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরটি লক্ষ্য করে আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা যাচ্ছে। নাগর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী দাবি করছে, তারাও গানজা শহরে হামলা চালিয়ে সেখানকার বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে।
এদিকে আজারবাইজানের বাহিনীও নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহরে কেবল সাইরেন আর গোলা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে।
স্টেপানাকার্ট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ বাসে করে শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দুদেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ তুলছে। এ পর্যন্ত উভয়পক্ষে প্রায় ২৪০ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক মানুষ। মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই লড়াই শুরু হওয়ার পর এখন তা আরো বিস্তৃত হচ্ছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান সংঘাতে উভয় পক্ষেরই সামরিক ও বেসামরিক অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। যদিও হতাহতের এসব তথ্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে তাদের সেনাবাহিনী গতকাল রোববার ওই অঞ্চলের সাতটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে নাগর্নো-কারাবাখের দাবি, তাদের সৈন্য অবস্থানের দিক থেকে বেশ ভালোরকম অগ্রগতি করেছে।
এদিকে নাগর্নো-কারাবাখে যুদ্ধ বিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আহ্বান জানাচ্ছে, কোন দেশই এখনো তাতে সাড়া দেয়নি।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে আর্মেনিয়া ঘোষণা দিয়েছিল যে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজি আছে। তবে আর্মেনিয়া বলেছেন, নাগর্নো-কারাবাখ আর্মেনিয়ার সেনা প্রত্যাহারের আগে কোনো আলোচনা তারা করবে না। এই সংঘাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। আর্মেনিয়া বলছে, তারা আপস আলোচনায় রাজি।
কিন্তু আজারবাইজান বলেছে, যেকোনো আলোচনায় বসার আগে আর্মেনিয়ার বাহিনীকে অবশ্যই নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল
নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ ছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় নাগর্নো-কারাবাখ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে মারা যায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। নাগর্নো-কারাবাখের স্বাধীনতাকে বিশ্বের কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি।