মস্তিষ্কে চলছিল জটিল অস্ত্রোপচার, বেহালা বাজাচ্ছিলেন রোগী

অপারেশন থিয়েটারে চলছে জটিল অস্ত্রোপচার। এক রোগীর মস্তিষ্ক থেকে টিউমার কেটে ফেলে দিতে ব্যস্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই অপারেশন টেবিলে শুয়ে থাকা ড্যাগমার টার্নার নামের ওই রোগীর। নিবিষ্ট মনে বেহালায় সুর তুলছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে সম্প্রতি ঘটেছে এমনই এক ঘটনা। আর ওই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চিকিৎসকরা জানান, ৪০ বছর ধরে বেহালা বাজাচ্ছেন ড্যাগমার টার্নার নামের ৬১ বছরের ওই নারী। এটাই তাঁর একমাত্র শখ ও নেশা। কিন্তু তাঁর মস্তিষ্কের ডানদিকে ফ্রন্টাল লোবে বাসা বেঁধেছে মরণঘাতী টিউমার। এর ফলে হয়তো ওই নারীর পক্ষে আর কোনোদিন বেহালা বাজানো সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, মস্তিষ্কের যে অংশ মানব শরীরের বাঁ হাতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে, তার আশপাশেই সৃষ্টি হয় টিউমারটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক কেউমারস আশকানের তত্ত্বাবধানে ড্যাগমার টার্নারের অস্ত্রোপচার হয়। নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ কেউমারস আশকান আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, কিছুতেই তাঁর রোগীর বেহালা বাজানোর ক্ষমতা হারিয়ে যেতে দেবেন না। তাই অস্ত্রোপচারের জন্য অভিনব এক ছক কষেছিল অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দল। তাঁরা পরিকল্পনা করেন, যখন খুলি খুলে অস্ত্রোপচার চলবে, তখন বেহালা বাজাবেন ড্যাগমার। তাহলে তাঁর বেহালা বাজানোর ক্ষমতা ঠিক থাকছে, নাকি কোনো অসুবিধা হচ্ছে, তা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারবেন চিকিৎসকরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে ড্যাগমার টার্নারের মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ টিউমার সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। মস্তিষ্কের যেসব অংশে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা ছিল, তা এড়ানো গেছে। এখন আর ভয়ের কিছু নেই। আর অস্ত্রোপচারের পরও ড্যাগমারের বাঁ হাত ঠিকঠাক কাজ করছে। তাই বেহালা বাজাতে পারবেন তিনি।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ড্যাগমার। তিনি বলেন, ‘বেহালাই আমার নেশা। ১০ বছর বয়স থেকে বেহালা বাজাই। আর কোনোদিন বেহালা বাজাতে পারব না, এমন চিন্তা করলেই বুক কাঁপন ধরত।’