শ্রীলঙ্কা ‘দেউলিয়া’ হওয়ার সত্যটা গোপন রেখেছিল রাজাপাকসে সরকার : বিক্রমাসিংহে
বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা যে অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ছে, সেই সত্য সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকার গোপন করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, বিক্ষোভে উৎখাত হওয়া শ্রীলঙ্কার সাবেক নেতা গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকার সত্যটা জানায়নি যে, শ্রীলঙ্কা ‘দেউলিয়া’ হয়ে পড়েছে এবং সেজন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির মত জরুরি রসদ আমদানিও অসম্ভব হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কার জন্য। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি কঠিন করে তুলেছে জীবন।
ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে গত সপ্তাহে গোটাবায়া রাজপাকসে পালিয়ে মালদ্বীপ হয়ে সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাঁর পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের মধ্যে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছিলেন গোটবায়া। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হয়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সঙ্কটের দায় গোটাবায়ার সরকারের ওপরই চাপালেন তাঁর এক সময়ের মিত্র বিক্রমাসিংহে।
সোমবার দেশের প্রশাসনিক রাজধানী শ্রী জয়াবর্ধনেপুরা কোট্টের পার্লামেন্ট থেকে সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন বিক্রমাসিংহে। সাক্ষাৎকারে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি জানি তারা কতটা কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা পিছিয়ে গেছি। নিজেদের যা আছে তা দিয়েই আমরা আবার নিজেদের টেনে তুলতে চাই।’
দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থায় ফেরানোর প্রত্যয় জানিয়ে এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের পাঁচ বছর বা ১০ বছরের প্রয়োজন নেই। চলুন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ আবার স্থিতিশীলতায় ফিরতে শুরু করি, আর ২০২৪ সালের মধ্যে একটি কার্যকর অর্থনীতি গড়ে তুলি, যা বাড়তে শুরু করবে।’
গত সপ্তাহে গোটাবায়ার পালিয়ে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি দাবি করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনও সিঙ্গাপুরে আছেন, না অন্য কোথাও চলে গেছেন- তা তিনি জানেন না।
এদিকে, বুধবার নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ভোট হবে শ্রীলঙ্কায়, তাতে প্রার্থী হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহেও। ছয়বারের এই প্রধানমন্ত্রী কোনোবারই তাঁর ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেননি।
কিন্তু বিক্রমাসিংহের উচ্চাভিলাস সোয়া দুই কোটি মানুষের এই দেশে এরই মধ্যে নতুন অস্থিরতার হুমকি তৈরি করেছে। গত সপ্তাহে গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দ্প্তরে ঢুকে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানায়।
গত সপ্তাহে আন্দোলনকারীরা গোটাবায়ার বাসভবন দখল করে নেয় এবং রনিল বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন দেয়। জনরোষ থেকে বাঁচতে গোটাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে পদত্যাগ করলে জয় পায় বিক্ষোভকারীরা।
রাজাপাকসের পদত্যাগের আগে রনিল বিক্রমাসিংহে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি মত বদলেছেন।
সিএনএনকে তিনি বলেন, তাঁর যে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখানকার বেশিরভাগ জিনিসই রক্ষা করা যায়নি। চার হাজারের বেশি বই সেখানে নষ্ট হয়েছে, যার মধ্যে শত বছরের পুরনো বইও ছিল। ১২৫ বছরের পুরনো একটি পিয়ানোও পুড়ে গেছে।
এরপরও দেশের সর্বোচ্চ পদে লড়াইয়ের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বিক্রমাসিংহে সিএনএনকে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমি আর বিগত সরকার এক নয়। জনগণও সেটা জানে। আমি দেশের অর্থনীতির হাল ধরতে এসেছি।’
কেন বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন এবং ফের জনরোষের নিশানায় আসার ঝুঁকি নিচ্ছেন?
সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমার দেশে যা হচ্ছে, আমি চাই না এটা চলতে থাকুক। আমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, আমি চাই না অন্য কেউ ভুক্তভোগী হোক… অন্য কারও ক্ষেত্রে এমনটি হোক নিশ্চয় আমি তা চাই না।’