‘আমার রক্ত চাই, আমি খুন করতে চাই’
‘আমার একটু রক্ত চাই, আমি কাউকে খুন করতে চাই’, কয়েক বছর আগে এমনভাবেই বন্ধুকে বলেছিল গত বুধবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পার্লামেন্ট হাউসে হামলাকারী খালিদ মাসুদ। মাসুদের ওই বন্ধুর নাম লী লরেন্স।
লরেন্স জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পুর্ব সাসেক্সে এক ব্যক্তিকে মারধর করে মাসুদ। এতে ওই ব্যক্তির মুখে ২০টি সেলাই দেওয়া লাগে। ঘটনার জেরে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় মাসুদকে।
লরেন্স আরো জানান, জেল থেকে বের হওয়ার পর একদিন রেগে থাকা মাসুদকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন লরেন্স। হঠাৎ তাঁর ওপরেই খাপ্পা হয়ে ওঠে মাসুদ। তখন লরেন্সের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ওই কথাগুলো বলে সে। তবে পরক্ষণেই নাকি শান্ত হয়ে ওঠে মাসুদ।
মাথা ঠান্ডা হলে মাসুদ বলে, ‘আমি রক্ত চাই, আমি কাউকে খুন করতে চাই?’
১৬ বছর আগে মাসুদ মানুষ খুনের স্বপ্নও দেখতেন বলে জানিয়েছেন লরেন্স।
মার্ক অ্যাশডাউন নামে মাসুদের শৈশবের এক বন্ধু জানান, কারাগারে থাকতে মাসুদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর আগে তাঁর নাম ছিল আদ্রিয়ান রাসেল অ্যাজাও। মার্ক বলেন, ‘যখন সে (মাসুদ) আমার কাছে এসে বলল, সে ইসলাম গ্রহণ করেছে, আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি।’
‘এরপর থেকে আমি তাকে খুব সচেতন হতে দেখলাম। সে বলত, অন্তরের শান্তির জন্য তাকে প্রার্থনা করতে ও কুরআন পড়তে হবে।’
মাসুদের অরেক বন্ধু জানান, সবদিন দিয়ে ভালো ছেলে ছিল মাসুদ। সে খুব জনপ্রিয় ও ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিল।
এর আগে, গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচজন নিহত হন। এতে আহত হন কমপক্ষে ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে পিসি কিথ পালমার (৪৮) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। পুলিশ জানায় হামলাকারীর নাম খালিদ মাসুদ। সে দক্ষিণ-পূর্ব ব্রিটেনের কেন্ট অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানায়, বুধবার দুপুরে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার সেতু দিয়ে একটি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করে মাসুদ। এর পর ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। পথে সেতুর ওপর থাকা লোকজনকে চাপা দেয় সে। এতে নিহত হয় দুজন। তাদের মধ্যে এক নারীও ছিলেন। এ ছাড়া তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয় অনেকেই।
সেতু পার হয়ে মাসুদ গাড়ি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের বিগ বেন ঘড়িসংলগ্ন দেয়ালে ধাক্কা দেয়। এর পর গাড়ি থেকে নেমে পার্লামেন্ট ভবন প্রাঙ্গণে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় তার কাছে একটি ছুরি ছিল।
পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে অনুপ্রবেশের পর কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা পিসি পালমার মাসুদকে বাধা দেন। কিন্তু পালমারের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। তখন ছুরি দিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার আঘাত করে মাসুদ। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। পরে সেখানে থাকা অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী মাসুদ।