চীনে নারীদের জন্য আলাদা মসজিদ
চীনে নারীদের জন্য আছে একটি আলাদা মসজিদ। দেশটির হেনান প্রদেশের কাইফেং শহরে, ইয়েলো রিভার বা পীত নদীর অববাহিকার ঠিক মাঝখানে এই মসজিদটির অবস্থান।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, কাইফেং ছিল সং রাজবংশের প্রাচীন রাজধানী। এক হাজার বছর আগে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম ছিল কাইফেং, আর নানা ধর্মের সমাবেশ হয়েছিল এই ঐতিহ্যবাহী নগরীতে।
ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম- উভয়ই কাইফেংয়ে পা রাখে সপ্তম শতাব্দীতে। ওই শহরের ওল্ড সিটির সরু গলিগুলোর মাঝে আজও আছে খ্রিস্টানদের গীর্জা, মুসলিমদের মসজিদ, বৌদ্ধ ও দাওয়িস্টদের মন্দির। এমনকি সেখানে চীনের হাতেগোনা কিছু ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজনও আছেন, আছে তাদের উপাসনালয়ও।
তবে কাইফেংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো শুধু নারীদের জন্য মসজিদ। সে মসজিদের ইমামও একজন মহিলা।
শহরে পুরুষদের জন্য যে প্রধান মসজিদটি আছে, তার উল্টো দিকের গলিতেই মেয়েদের জন্য এই মসজিদ। আশপাশে বহু খাবারের দোকানও আছে সেখানে।
মসজিদের ইমামের নাম গুয়ো জিংফাং। তাঁর বাবা ছিলেন পুরুষদের মসজিদের ইমাম, তার কাছেই ইমামতি শিখেছেন তিনি।
শুধু নারীদের জন্য কাইফেংয়ে যেসব মসজিদ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এই ‘ওয়াংজিয়া গলির মসজিদ’। এটি তৈরি হয়েছিল প্রায় দুইশ বছর আগে ১৮২০ সালে।
ইমাম গুয়ো জিংফাং বলছিলেন, নারীদের জন্য মসজিদ চীনের একটি বৈশিষ্ট্য। তবে হেনান প্রদেশেই এই ধরনের মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কাইফেং শহরেই যেমন মেয়েদের জন্য মসজিদ আছে মোট ১৬টি। আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় আরো প্রচুর। ইয়ুনান বা ঝেংজোউতেও আছে শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা অনেক মসজিদ।
তবে চীনের যেটা একমাত্র মুসলিম প্রদেশ, সেই শিনজিয়াংয়ে কিন্তু এমন কোনো মসজিদ নেই। তারা সেখানে সুন্নি ইসলামেরই একটি মধ্য এশিয়া-ঘেঁষা ধারা অনুসরণ করে থাকে।
বিবিসির গবেষক মাইকেল উড বলছেন, ষোড়শ শতাব্দীতে চীনের মুসলিম সমাজের মধ্যে এই উপলব্ধিটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যে, তাদের ধর্মবিশ্বাসকে টিঁকিয়ে রাখতে হলে নারীদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের মুসলিমদের মধ্যে তখন থেকেই মেয়েদের পড়াশোনা করানোর ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হতে থাকে। কাইফেংয়ে গুয়ো জিংফাং ও তার বন্ধুরা বলছিলেন, প্রথমে মেয়েদের কোরআন ও ধর্মশিক্ষা দেওয়ার জন্য নানা স্কুল গড়ে তোলা হয়। পরে সেগুলোই অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পুরোদস্তুর মসজিদে রূপ নেয়।
এক মুসলিম মহিলা সেখানে বলছিলেন, 'আমাদের মায়েরা যখন ছোট ছিলেন, তখন গরিব মুসলিম মেয়েদের পড়াশোনার একমাত্র সুযোগ ছিল এই মসজিদগুলো। মেয়েরাই তখন মেয়েদের দেখেছে।’
'আমি জানি মুসলিম দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই মেয়েদের জন্য আলাদা মসজিদের কোনো অনুমতি নেই। কিন্তু আমাদের এখানে এটা একটা খুব ভালো ব্যাপার বলেই আমরা মনে করি', তিনি আরো যোগ করেন।
১৯৪৯ থেকে চীনে মুসলিম মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেড়েছে। আর শুধু মেয়েদের জন্য এই মসজিদগুলো সেই প্রক্রিয়ারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন কাইফেংয়ের মুসলিম নারীরা।