ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৪৪২
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ রোববার (৩০ নভেম্বর) নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়ানোর পর নতুন করে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হলেও বহু এলাকা এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আংশিকভাবে ফিরেছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট।
মৌসুমি বৃষ্টি ও ক্রান্তীয় ঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়—থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাতেও শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, দুর্যোগের কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে লাখো মানুষের জীবন। খবর বিবিসির।
বিরল ক্রান্তীয় ঝড় ‘সেনিয়ার’ এর প্রভাবে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধস দেখা দেয়। নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে শহর-গ্রাম ভাসিয়ে নেয়, মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। আচেহ প্রদেশের প্রান্তিক জনপদ টাপানুলি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খাদ্য সংকটে দোকান লুটের খবরও মিলেছে।
আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা আরিন আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, কিছু সেকেন্ডের মধ্যে পানি রাস্তা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। পরদিন ফিরে দেখি ঘরটাই নেই—পুরোটা পানির নিচে।
মেরি ওসমান নামে এক বাসিন্দা জানান, হঠাৎ পানি ওঠার পর তিনি স্রোতের টানে ভেসে যান এবং কাপড় শুকানোর দড়ি ধরে ঝুলে থেকে প্রাণে বাঁচেন।
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। পোশাক রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ঘরটাই ভেঙে গেল।
পাশের দেশ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সঙখলা প্রদেশে পানি তিন মিটার পর্যন্ত উঠে অন্তত ১৪৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। মোট ১০টি প্রদেশে ৩৮ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
হাট ইয়াই শহরে একদিনে ৩৩৫ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে—যা গত ৩০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মৃতদেহ রাখার জায়গা না থাকায় একটি হাসপাতালকে মরদেহ ট্রাকে সংরক্ষণ করতে হয়েছে।
মালয়েশিয়ার পেরলিস প্রদেশে মৃত্যু তুলনামূলক কম হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় ‘ডিটওয়া’ নামের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ গেছে অন্তত ১৯৩ জনের, নিখোঁজ ২০০’র বেশি। ১৫ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ৭৮ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিলিপাইনে আঘাত হানা টাইফুন ‘কোটো’ এবং মালাক্কা প্রণালীতে গঠিত বিরল ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’—এই দুই শক্তিশালী সিস্টেমের পারস্পরিক প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়া বেশি অস্থিতিশীল হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের চরম আবহাওয়া আরও ঘনঘন ও তীব্রভাবে ঘটছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক