ট্রাম্প-ওবামা মুখে বলছেন এক, মনে আরেক!
যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রথা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠক শেষে বেরিয়ে চমক সৃষ্টি করে এবারের নির্বাচনে জয়ী ট্রাম্প সাংবাদিকদের শোনান আন্তরিক ও ফলপ্রসূ বৈঠকের কথা।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময়ে এই ট্রাম্পকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার যোগ্য নয় বলে প্রচার করেছিল ডেমোক্রেটিক দলের প্রচারণা শিবির। আর এই প্রচারণায় অন্যতম পুরোধা ছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। এমনকি তিনি নিজেও ট্রাম্পকে বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য যোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট বলে বর্ণনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা আদৌ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছেন কি না, তা নিয়ে তিনি বহুদিন ধরে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।
জনতার রায়ে সেই ট্রাম্পই এবার হোয়াইট হাউসের দোরগোড়ায়। রীতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামাও জয়ের পর বৈঠক করেছেন তাঁর সঙ্গে। কী কথা হয়েছিল বৃহস্পতিবারের সেই বৈঠকে? জানতে উদগ্রীব সাংবাদিকদের সামনে বৈঠক শেষে দুজনই হাজির হয়েছিলেন একসঙ্গে।
বৈঠকের পর মিস্টার ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ‘খুবই ভালো একজন মানুষ’ বলে বর্ণনা করেন এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা মিস্টার ট্রাম্পের সাফল্য কামনা করেন। শুনিয়েছেন ফলপ্রসূ ও আন্তরিক বৈঠকের কথাও। এমনকি দুজনই দুজনের ভুয়সী প্রশংসাও করেছেন।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের ওই বৈঠকের ছবি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখে তাঁরা এক কথা বললেও ছবিতে তাঁদের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) একেবারেই ভিন্ন কথা বলছে।
ব্যাপারটি ব্যাখ্যার জন্য শারীরিক ভাষা বিশেষজ্ঞ প্যাটি উডের বরাতে দুজনের করমর্দনের ছবি প্রকাশ করে বিবিসি। যেখানে দেখা যায়, দাঁতে দাঁত চাপছেন ট্রাম্প, ওবামার মুখ পাথরের মতো।
দুজনের করমর্দনের সময় দাঁতে দাঁত চাপছেন ট্রাম্প, ওবামার মুখ পাথরের মতো।
এ ছাড়া প্যাটি উড গতকাল ওবামা এবং ট্রাম্পের একসঙ্গে বসে কথা বলার সময় তোলা ছবি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি লন্ডনের ডেইলি মেইলকে বলেন, মুখে তাঁরা যাই বলুন, তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে দুজনের মধ্যে কোথাও একটা ‘ঝামেলা’ চলছে।
ট্রাম্প যেন সিদ্ধান্তই নিয়েছেন ওবামার চোখে চোখে তাকাবেন না।
আর ওবামার শারীরিক ভাষা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ওবামাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুবই অবসাদগ্রস্ত, যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং মোটেই আশাবাদী নন। অন্যদিকে ট্রাম্পকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুবই সিরিয়াস এবং এমন কিছু তথ্য তিনি শুনেছেন, যারপর তিনি শঙ্কার মধ্যে আছেন।
প্যাটি উড বলেন, ‘একটা ছবিতে ওবামাকে দুই পা এতটাই ছড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে যেন তিনি বলতে চাইছেন আমিই এখনো সবার ওপরে।’
অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর হাত জোড় করে যেভাবে নিচের দিকে ধরে রেখেছেন, সেটা দেখে মনে হচ্ছে তিনি এমন কিছু জেনেছেন, যেটা তাঁর আগে জানা ছিল না। এটা কিন্তু তাঁর স্বভাবসুলভ কোনো ভঙ্গি নয়।
ট্রাম্প তাঁর হাত জোড় করে রেখেছেন, যেটা তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গি নয়।