অভিবাসন বিতর্কে নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারের পতন
অভিবাসন ও আশ্রয় ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পতন হলো নেদারল্যান্ডসের চারদলীয় জোট সরকারের৷ মতবিরোধ দূর করে সরকার বাঁচাতে গতকাল শুক্রবার (৭ জুলাই) দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সভাপতিত্বে চার পক্ষ বৈঠকে বসলেও কোনো সমঝোতা ছাড়াই তা শেষ হয়৷
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নেদারল্যান্ডসকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী রুটে৷ তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আজ সন্ধ্যায় আমরা একটি সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পেরেছি, সেটা হলো—আমাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ দূর করা সম্ভব নয়৷ আর তাই আমি খুব দ্রুত সরকারের পক্ষ হয়ে রাজার কাছে আমার লিখিত পদত্যাগ জমা দেব৷’
আজ শনিবার রাজা ভিলেম আলেকজান্দারের কাছে রুটে পদত্যাগ জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে৷ আর নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি৷
গত বছর আশ্রয়শিবিরগুলোতে উপচে পড়া ভিড় নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর রুটের রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি শরণার্থীদের আগমন সীমিত করার চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের দুই অংশীদার রুটের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিলেন শুরু থেকে৷
বিরোধের কারণ
মূলত অভিবাসন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন জোট সরকারের অংশীদারেরা৷ সরকারের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিলেন ডানপন্থি ভিভিডি পার্টির নেতা রুটে৷
২০২২ সালে অভিবাসী আশ্রয়শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় আবাসন সংকটে পড়তে হয়েছিল সরকারকে৷ তখন আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলনকে সীমিত করার চেষ্টা করেছিলেন রুটে৷ দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া যুদ্ধ শরণার্থীদের আত্মীয়স্বজনদের পুনর্মিলন ভিসায় নেদারল্যান্ডসে আসা কমাতে প্রতিমাসে ২০০ জনে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি৷ আর এ প্রস্তাব মানা না হলে সরকারের পতনের হুমকিও দেন জোটের শরিকদের৷
জোট সরকারের দুই শরিক ক্রিস্টেন ইউনি ও ডি৬৬ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে৷ কারণ, তারা মনে করে এভাবে সংকটের সমাধান হয় না৷
২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া জোট সরকার সংকট কাটাতে বুধ এবং বৃহস্পতিবারও আলোচনা করেছিল৷ সবশেষ শুক্রবার রুটে নিজেও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি৷
ক্রিশ্চিয়ান ইউনির মুখপাত্র টিম কায়েস্তে বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে না বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
ডাচ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আর লুকানোর কিছু নেই যে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল৷’ মাত্র দেড় বছরের মাথায় সরকারের পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটিই খুবই দুঃখজনক, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা৷’
নেদারল্যান্ডসে আশ্রয় আবেদন গত বছর এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ দেখা গেছে, দেশটিতে গেল বছর ৪৬ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা হয়েছে৷ সরকারের ধারণা, চলতি বছর সেই সংখ্যাটি ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে৷ আর এই ধারণা সত্য হলে তা ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময়কেও ছাড়িয়ে যাবে৷
কী হতে যাচ্ছে?
সূচি অনুযায়ী, এই সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করলে ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন তার আগেই নির্বাচন হবে৷ বিরোধীদলগুলো এরমধ্যেই দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে৷ শুক্রবার রাতে কট্টর অভিবাসন বিরোধী দল পিভিভির নেতা গির্ট ভিল্ডারস দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন৷ গ্রিন লেফট পার্টির নেতা জেসি ক্লেভারও নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ ডাচ সম্প্রচার কেন্দ্র এনওএসকে তিনি বলেছেন, ‘এই দেশটির দিক পরিবর্তন দরকার৷’
এমনও হতে পারে, দেশটির রাজা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জোট গঠন করে সরকার পরিচালনার কথা বলতে পারেন, কিন্তু নানা হিসাব নিকাশের কারণে সেটা এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, ২০২১ সালের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দলই এককভাবে ভালো ফল করতে পারেনি৷ ফলে জোট করে সরকার গঠন করতেই চলে যায় নয় মাস৷
প্রধানমন্ত্রী রুটের দল ভিভিডি সবচেয়ে বেশি, ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ আর দুটি দলের ১০ শতাংশের ওপরে ভোট ছিল৷ আরও ১৭টি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্টে একটি করে আসন পেয়েছিল৷ ফলে, ভেঙে যাওয়া জোটকে বাদ দিলে, অন্যদের নিয়ে নতুন করে জোট সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই৷
নতুন নির্বাচন দেওয়া হলেও দল টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারবেন বলে আশা করেন মার্ক রুটে৷ শিশুদের যত্নআত্তি সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, কিন্তু তারপরের নির্বাচনেও রুটে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন৷