লিবিয়ায় বন্যা : ক্ষীণ হচ্ছে জীবিতদের উদ্ধারের আশা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/09/16/libiyyaa-thaamb.jpg)
ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। মৃত্যুপুরী হওয়া দেশটিতে শুধু ধসে পড়া ভবন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশটিতে দ্রুতগতিতে সংক্রামক রোগের বিস্তার হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সাহায্য পাঠানো গোষ্ঠীগুলো। তারা বলছে, ক্রমবর্ধমান সংক্রামক রোগে দেশটির সংকট আরও বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি বিপর্যয়কর বন্যার কয়েক দিন পরে জীবিতদের উদ্ধারের আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ড্যানিয়েলের আঘাতে গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে দুটি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে বন্দরনগরী ডেরনায়। ঝড়-বন্যার তোড়ে ওই রাতে ভেসে ও ধসে যায় অনেক ভবন। শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। প্লাবিত হয় গোটা শহর। ভূমধ্যসাগরে ভেসে যান অগণিত মানুষ।
ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট বিপর্যয়কর এই বন্যায় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে কতজন নিহত হয়েছে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্যায় তিন হাজার ৮৪০ জন নিহত হয়েছে।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ডেরনায় এখনও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ। তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। তবে, ধ্বংসস্তূপের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বন্যায় অসংখ্য মানুষকে ভূমধ্যসাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তীব্র স্রোতের কারণে সমুদ্রের ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মরদেহ ভেসে গেছে।
ইসলামিক রিলিফ এবং ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর মতো অন্যান্য সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, আসন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধের পাশাপাশি প্রয়োজনীয়দের সহায়তা দিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
ইসলামিক রিলিফ সতর্ক করেছে মানবিক সংকট নিয়েও। সাহায্যকারী গোষ্ঠীটি বলছে, ‘বন্যার পরে পানিবাহত রোগ ও খাদ্য, বাসস্থান এবং ওষুধ সংকট বাড়তে পারে।’ সংস্থাটির উপপরিচালক সালাহ আবুলগাসে বলেন, ‘হাজার হাজার লোকের মাথা গোঁজার ঠাই নেই। এমতাবস্থায় সুপেয় পানি দূষিত হতে পারে। এতে করে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। শহরটিতে মৃতদেহের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। শহরটির বেঁচে যাওয়ারা সবাই কাউকে না কাউকে হারিয়েছে।’
পূর্বাঞ্চলে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য একটি টিম নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এমএসএফ। সংস্থাটির চিকিৎসা সমন্বয়কারী মানোয়েল কার্টন বলেন, ‘এই ধরনের সময়ে আমরা পানি সম্পর্কিত রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকি।’ তবে, রেড ক্রস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মরদেহ খুব কমই মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
ডেরনায় অবস্থান করা এএফপির একজন সাংবাদিক বলেন, ‘সাধারণত এ সময়ে নদীর দুপাশের এলাকাগুলো শুকনো থাকে। তবে, এবার তেমটি নেই। দেখে মনে হচ্ছে, এসব এলাকায় স্টিম রোলার চলেছে। গাছ ও ভবন উপড়ে গেছে, যানবাহনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।’
পূর্বে জাতিসংঘের দূত হিসেবে লিবিয়ায় নিযুক্ত ছিলেন স্টেপানিহ উইলিয়াম। এই মার্কিন কূটনৈতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট বন্যার প্রেক্ষিতে বিশ্বনেতা সংঘবদ্ধভাবে সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানান। এই নারী সতর্ক করে বলেছেন, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মালিকানার অজুহাত দেখিয়ে সাহায্যের অর্থ নিজেদের জন্য ব্যবহার করতে পারেন লিবিয়ার শাসকরা।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ক্ষমতায় থাকা খলিফা হাফতার সরকারের মুখপাত্র আহমেদ আল-মেসমারি শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য সহায়তা চাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ দেশটিকে সাত কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি আবেদন করেছে। শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘আমরা ক্ষয়ক্ষতি বা সমস্যার পরিমাণ জানি না।’ লিবিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2023/09/16/libiyyaa-in.jpg)
লিবিয়া রেডক্রসের মুখপাত্র তৌফিক সুকরি এএফপিকে বলেন, ‘ডেরনায় এখনও নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মরদেহ খোঁজা হচ্ছে।’