ধর্মঘটে নাজেহাল জার্মানির বিমানবন্দর, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট করছে জার্মানির বিমানবন্দরের কর্মীরা। এতে ফ্রাঙ্কফুর্ট, বার্লিন ও মিউনিখের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির ১১টি বড় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
জার্মানির বিমানবন্দর সংস্থা এডিভি বলছে, ধর্মঘটের কারণে দেশটির এক হাজারের মতো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া বিলম্বিত হয়েছে বেশ কিছু ফ্লাইট। এতে ঝামেলায় পরেছে প্রায় দুই লাখ যাত্রী।
গতকাল বুধবার রাতে কোলন-বন বিমানবন্দরের রাতের শিফটে অনুপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। তখন থেকেই ধর্মঘটের সূচনা।
কর্মী ইউনিয়ন ভের্দির মুখপাত্র ও্যৎসে টারিম জানান, কোলন-বন বিমানবন্দরে ধর্মঘটে বসেন বিমানবন্দরের সব কর্মী। সাফল্যের সঙ্গে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হতে পারে।
ধর্মঘটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব যেখানে
ভের্দি ধর্মঘটের ডাক দিলে ফ্রাঙ্কফুর্ট, হামবুর্গ, বার্লিন, ব্রেমেন, লাইপজিশ, ড্যুসেলডর্ফ, কোলন, হানোফার, স্টুটগার্ট, এরফুর্ট ও ড্রেসডেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরাও কর্ম বিরতিতে যান। তাই বার্লিন, হামবুর্গ, হানোফার ও স্টুটগার্ট থেকে কোনো ফ্লাইট ছাড়েনি। অন্যান্য ফ্লাইট নামতেও ব্যাপক দেরি হয়। অন্যদিকে ড্যুসেলডর্ফ বিমানবন্দরে মোট ফ্লাইটের এক-তৃতীয়াংশ বাতিল হয়।
টারিম জানান, সেখানে কর্মরত নিরাপত্তা সংস্থা তার কর্মীদের ধর্মঘট ভাঙার বোনাস হিসেবে দুইশ ইউরো দিয়েছে।
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য বাভারিয়ার মিউনিখ ও ন্যুরেমবার্গ বিমানবন্দরে ধর্মঘটের কোনো ছাপ নেই, কারণ, সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীদের সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরের পরিস্থিতি
ফ্রাঙ্কফুর্ট জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেখান থেকে কোনো ফ্লাইট ছাড়েনি। বিমানবন্দর পরিচালনা সংস্থা ফ্রাপোর্ট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, এই ধর্মঘটের ফলে গোটা দিনজুড়ে ফ্লাইট চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে। বিশেষ করে, ট্রানজিট অঞ্চলের বাইরের নিরাপত্তা যাচাই স্থানগুলো বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। এয়ারলাইনস সংস্থাকে যোগাযোগ করে বিকল্প খোঁজার পরামর্শও দেওয়া হয়।
জার্মানির মূল এয়ারলাইন লুফটহানসা জানিয়েছে, যাত্রীরা ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট নতুন করে বুক করতে পারবেন। পাশাপাশি, যাত্রীদের জার্মানির ভেতর যাত্রার জন্য বিনামূল্যে ট্রেনের টিকিট দেয় তারা।
ধর্মঘটে বসা কর্মীদের দাবি
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের সংস্থা বিডিএলএসের সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনার পর কোনো সমাধান না উঠে আসায় ধর্মঘটের ডাক দেয় কর্মী ইউনিয়ন ভেরদি। প্রতি ঘণ্টার মজুরিকে দুই দশমিক আট ইউরো বাড়ানোর দাবি করছেন কর্মীরা।
বিডিএলএসের মুখপাত্র জানান, তারা এই বছরে চার শতাংশ ও আগামী বছরে তিন শতাংশ বেতন বাড়াবার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউনিয়নের দাবি মানতে পারছেন না।
ডয়চে ভেলের অর্থনীতি বিষয়ক রিপোর্টার ক্রিস্টি প্লাডসনের মতে, ‘ভের্দির কর্মীরা যা দাবি করছেন তার সঙ্গে বিমানবন্দরের কার্যক্ষমতার বিষয়টিও জড়িত। জার্মানিতে এখন বিভিন্ন খাতে শ্রমের মজুরি বাড়ানোর দাবি উঠছে। সঙ্গে উঠছে কাজের পরিবেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গও। এটা এখন এক ধরনের নতুন ট্রেন্ড।’
এর আগে, চলতি সপ্তাহে জার্মানির ট্রেন চালকরা ধর্মঘটে বসেন, যা দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেল ধর্মঘট ছিল। শুক্রবারে স্থানীয় পরিবহণ কর্মীদেরও ধর্মঘটে বসার ডাক দিয়েছে ভেরদি।