ট্রাম্পের মতো তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছেন যারা
মার্কিন ইতিহাসে এবার চলছে তুমুল লড়াইয়ের ভোট—তেমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। লড়োইয়ের একদিকে ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটের প্রার্থী কমলা হ্যারিস, অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাধা প্রতীক নিয়ে লড়ে চলা কমলার এখন পর্যন্ত শক্ত অবস্থান রয়েছে ১৪টি অঙ্গরাজ্যে, যেখানে ইলেক্ট্ররাল ভোট আছে ১৮৭টি। আবার আধিপত্য বিস্তার করে আছেন পাঁচ অঙ্গরাজ্যে, যেখানে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ৪৫টি। অন্যদিকে, ১২২ ইলেক্টোরালের ২০ অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ট্রাম্পের শক্ত অবস্থান। একইসঙ্গে পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের প্রভাব বিস্তার করে আছেন তিনি, যেখানে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ৯৪টি। আর ব্যাটেল ফিল্ড খ্যাত সাতটি সুইং অঙ্গরাজ্যে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১১৭টি।
সব মিলিয়ে কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে? কার ভাগ্য সুপ্রসন্ন—কমলা নাকি ট্রাম্পের, তা নিয়ে রীতিমতো মেতে আছে বিশ্ব। এরমেধ্যে চলছে ভোটগ্রহণ। ফরাসি গণমাধ্যম এএফপি বলছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে দেশটির পূর্ব উপকূলের অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে এই ভোটগ্রহণ। যদিও ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ভোটারের আট কোটি ২০ লাখ ভোটার তাদের আগাম ভোট প্রদান করে ফেলেছেন। সব রাজ্যের ভোটের ফলে জানা যাবে, কে হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্ণধার। যদিও এই ভোটের ফল জানতে অপেক্ষার প্রহর অন্য যেকোনো বারের তুলনায় বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ থেকে জো বাইডেনেরে কাছে হারা অবধি ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। যদিও দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ট্রাম্প এবার তৃতীয় দফায় লড়ছেন এবার। নানা বিতর্ক, সমালোচনা ও আইনি ঝামেলায় হার মানেননি তিনি। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভারতীয় মাতৃবংশের কৃষ্ণাজ্ঞ নারী হিসেবে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ম অনুসারে পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। আবার দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনেও আছে বাধা। সেহিসাবে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় মেয়াদে লড়ে হেরে গেলে আরেক বার ভোটের মাঠে নামা যায়। ট্রাম্পের বেলায়ও সেটিই হয়েছে। যদিও এর আগেও এমন ইতিহাস আছে। টমাস জেফারসন, উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান, গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, রিচার্ড নিক্সনও লড়েছিলেন তৃতীয়বার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিহাসের শুরুর দিকেই আছে তৃতীয় বার লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত
টমাস জেফারসন মার্কিন ক্ষমতায় আসেন ১৮০১ সালের ৪ মার্চ, থাকেন ১৮০৯ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত। দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময়কার ভায়েস প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডাম্স পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হন জেফারসন। সে সময়ের নিয়ম ছিল—ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হবেন প্রেসিডেন্ট আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সে হিসাবে অ্যাডামসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেফারসন যিনি ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকানের হয়ে পরের নির্বাচনে জিতে মসনদে গিয়েছিলেন। তারপর তৃতীয় দফায় ফের জিতে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসের অধিশ্বর হন তিনি।
তৃতীয় দফার বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে যে দল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পোর মতো যারা তৃতীয় দফায় নির্বাচন করেছেন তাদের মধ্যে একটি দল থেকে বেশি প্রবণতা দেখা গেছে। টমাস জেফারসন ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান পার্টির ছিলেন। তবে, এরপর এবারের ট্রাম্প বাদে আগে তৃতীয় বার লড়েছেন উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান, গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, রিচার্ড নিক্সন।
এক সময়ের নিউইয়র্কের গভর্নর গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির। তিনি তিনবার লড়েছেন। উড্রো উইলসনের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে একই দলের হয়ে তিনবার লড়ে হেরে যান উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৯৩২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রথমবার প্রার্থী হন। প্রথমবারই জিতে যান তিনি। ১৯৩৩ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এ দায়িত্ব সামলেছেন ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। ১৯৩৬ ও ১৯৪০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয় পান রুজভেল্ট। তাঁর আমলে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ালে নিজ দেশের রীতি ভেঙে দুই মেয়াদের বেশি সময় প্রেসিডেন্ট থাকার রেকর্ড ছিল তার দখলে।
রিপাবলিকান পার্টি থেকে ১৯৬০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন রিজার্ড নিক্সন। যদিও সেবার তিনি জয়ের মুখ দেখেননি। তবে, ১৯৬৮ সালের নির্বাচনে জিতে ওঠেন হোয়াইট হাউসে। এরপর ১৯৭২ সালে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে সহজ জয় পান পরবর্তীতে ওয়াটারগেট কেলঙ্কারিতে নাম লেখানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন।