নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে যে কারণে এগিয়ে মামদানি
নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি কেন জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন, এই প্রশ্নটি এখন মার্কিন রাজনীতির কেন্দ্রে। জুনে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে তার অভাবনীয় বিজয় এবং নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তার শক্তিশালী অবস্থান নিউইয়র্কের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় এক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। প্রথাগত রাজনীতির ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে গভীর সংযোগ এবং প্রগতিশীল নীতিই তাকে এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তি জুগিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রথাগত ডেমোক্র্যাটিক বার্তার প্রতি অনীহা
জোহরান মামদানির এই সাফল্য এমন এক সময়ে এলো, যখন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরাজয় প্রমাণ করেছে যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চিরাচরিত রাজনৈতিক বার্তা দুর্বল হয়ে পড়েছে, বিশেষত অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সাধ্যের মধ্যে জীবনধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে।
ম্যানহাটনের জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিসের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক সুসান ক্যাংয়ের মতে, মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুওমো বহু তরুণ ভোটারের কাছে সেই ‘পুরনো ও ক্লান্ত’ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতীক হয়ে উঠেছেন। প্রথাগত রাজনীতির প্রতি এই অনীহাই ভোটারদের মামদানির দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করেছে।
প্রগতিশীল নীতির প্রতি আকর্ষণ
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট নীতিগুলোকে সামনে নিয়ে আসা ‘বার্নি স্যান্ডার্স ইফেক্টের’ ধারাবাহিকতাও মামদানিকে এগিয়ে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ‘সমাজতন্ত্রী’ শব্দটি আমেরিকায় নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট তরুণ ও শ্রমজীবী মানুষকে তার ভাড়া স্থগিত, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা ও সর্বজনীন শিশুযত্নের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জনমুখী পরিকল্পনাগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এই নীতিগুলোর অর্থ জোগানোর জন্য তিনি কর্পোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
ব্যক্তিগত সংযোগ
মামদানির সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ হলো নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সংযোগ ও আন্তরিকতা। প্রথাগত রাজনীতিবিদদের মতো কঠোর মনোভাব না দেখিয়ে, তিনি নিউইয়র্কের বহু-সাংস্কৃতিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে উষ্ণতা ও পরিচিতি দেখিয়েছেন। তিনি হালাল কর্মী, ডেলিভারি কর্মী, সাবওয়ে যাত্রী ও ক্যাব চালকদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাগুলো নিয়মিত তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক সুসান ক্যাং বলেন, জোহরান সত্যিই দেখিয়েছেন তিনি নিউইয়র্ক সিটিকে ভালোবাসেন। তিনি এমন একটি শহর গড়ে তুলতে চান যা সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে। এই ব্যক্তিগত ও মানবিক সংযোগই তাকে এই রাজনৈতিক মুহূর্তে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় বিশেষভাবে তুলে ধরেছে।
এছাড়াও ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রতি তার স্পষ্টবাদী অবস্থান এবং গাজার পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করার সাহস তাকে মূলধারার মার্কিন রাজনীতিতে বিরল এক প্রগতিশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সূত্র : আলজাজিরা।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক