যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/11/21/aadaani-thaamb.jpg)
কোটি কোটি ডলার ঘুষ প্রদান এবং এ সংক্রান্ত তথ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে গোপন রাখার বিষয়ে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মার্কিন কৌঁসুলিরা গতকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।
কয়লা, বিমানবন্দর, সিমেন্ট থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের মতো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করপোরেট কেলেঙ্কারি ও স্টক মার্কেটে ধসের মতো ঘটনায় বেশ আলোচিত একটি নাম।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদানি লাভাজনক সোলার এনার্জি সাপ্লাই কন্ট্রাক্টে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদানের বিষয়ে সম্মত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই চুক্তিতে ২০ বছর ধরে কর প্রদানের পর ২০০ কোটি ডলার লাভ হতো বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে এই মামলায় গৌতম আদানিসহ একাধিক বিবাদী এখনও গ্রেপ্তার হননি বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটর অফিস বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, আদানির কথিত সহযোগীদের একজন খুব সতর্কতার সঙ্গে তার ফোন ব্যবহার করে ঘুষ প্রদানের বিষয়টিকে ট্র্যাক করতে পেরেছিলেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মিলার বলেন, ‘অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি ডলার তুলে নিতে ও বিচার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য।’
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের জেমস ডেনেহি বলেন, ‘গৌতম আদানি ও আরও সাতজন ব্যবসায়ী নির্বাহী লোভনীয় চুক্তির আওতায় তাদের ব্যবসার সুবিধা পেতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করেছিলেন। এ ছাড়া মামলার অন্য বিবাদীরা সরকারের তদন্ত কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ঘুষ প্রদানের এই ষড়যন্ত্রের কথা গোপন রাখতে চেষ্টা করেছিলেন।’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/11/21/aadaani-inaar.jpg)
নিজেকে অন্তর্মুখী হিসেবে বর্ণনা করা গৌতম আদানি খুব কমই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। করপোরেট বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি তার সহকর্মীদের পাঠান।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গৌতম আদানি। ১৬ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছাড়েন এবং দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে লাভজনক রত্ন ব্যবসায় কাজ খুঁজতে যান। কিছু সময় তার ভাইয়ের প্লাস্টিক ব্যবসায় কাজ করার পর ১৯৮৮ সালে তার পারিবারিক নামে ব্যবসা শুরু করেন এবং রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িয়ে যান। প্রায় সাত বছর পর নীরবতা ভেঙে গুজরাট বন্দরের বাণিজ্যিক পরিচালনার চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
পুঁজি ভিত্তিক ব্যবসায় আদানি গ্রুপের দ্রুত সম্প্রসারণ আগেই শঙ্কা জাগিয়েছিল। ফিচের সহযোগী সংস্থা এবং বাজার গবেষক ক্রেডিটসাইটস ২০২২ সালে সতর্ক করে দিয়েছিল যে প্রতিষ্ঠানটি অতিউৎসাহী হয়ে অতিরিক্ত সুবিধা নিচ্ছে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ তাদের এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে জানায়, আদানি গ্রুপ কয়েক মশক ধরে স্টক কারসাজি ও হিসাব জালিয়াতির প্রকল্পে জড়িত।
হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে কয়েক যুগ ধরে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতার কারণে বিনিয়োগকারী, সাংবাদিক, সচেতন নাগরিক ও রাজনীতিবিদরা ‘প্রতিশোধ পরানয়তার’ ভয়ে তাদের তৎপরতাকে চ্যালেঞ্জ করতে অনুৎসাহী ছিলেন।