তথ্য ফাঁসের দায়ে টিকটককে ৬০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা

ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে স্থানান্তরের অভিযোগে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার (২ মে) ডেটা সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের দায়ে চীনা এই কোম্পানিটিকে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। খবর এএফপি।
ইইউ-এর অভিযোগ, টিকটক ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা চীনে পাঠিয়েছে এবং চীনা কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য অ্যাক্সেস থেকে সেই ডেটা সুরক্ষার পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। তারা জোর দিয়ে বলেছে, ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ডেটার জন্য তারা কখনোই চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুরোধ পায়নি।
তদন্ত পরিচালনাকারী আয়ারল্যান্ডের ডেটা সুরক্ষা কমিশন (ডিপিসি) জানিয়েছে, চীনা মালিকানাধীন এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট পূর্বে অস্বীকার করা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনেই হোস্ট করার কথা স্বীকার করেছে। টিকটকের বিরুদ্ধে ইইউ-এর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেটা সুরক্ষা জরিমানা।
বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন ব্যবহারকারীর এই প্ল্যাটফর্মটিকে ২০২৩ সালে শিশুদের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য ৩৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল একই আইরিশ সংস্থা। টিকটক মূলত চীনা টেক জায়ান্ট বাইটড্যান্সের একটি বিভাগ। তবে ইউরোপীয় সদর দপ্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত হওয়ায়, এই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে আইরিশ কর্তৃপক্ষ। গুগল, মেটা ও এক্স-এর মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
ডিপিসি কর্মকর্তা গ্রাহাম ডয়েল বলেন, ‘ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনের কর্মীরা ব্যবহার করলেও, টিকটক সেই ডেটার সুরক্ষা ইইউ-এর সমতুল্য করতে পারেনি, যা প্রমাণে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

গ্রাহাম ডয়েল আরও বলেন, ‘ইইউ মানের থেকে ভিন্ন চীনা সন্ত্রাসবিরোধী, গুপ্তচরবৃত্তি বিরোধী এবং টিকটক কর্তৃক চিহ্নিত অন্যান্য আইনের অধীনে চীনা কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য ডেটা অ্যাক্সেসের বিষয়ে টিকটক কোনো তথ্য জানায়নি।’
তবে টিকটক ইউরোপের ক্রিস্টিন গ্রান এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘(টিকটক) তাদের ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর ডেটা কখনও সরবরাহ করেনি।’ তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ আপিল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, গুপ্তচরবৃত্তি বা প্রচারণার উদ্দেশ্যে চীন ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতে পারে—এমন আশঙ্কায় পশ্চিমা সরকারগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।