ইরাক ও ইরান : বুশের প্রতিধ্বনি করছেন ট্রাম্প?

‘আজ, আমাদের একটি বিপজ্জনক ও আক্রমণাত্মক শাসন ভেঙে একটি জাতিকে মুক্ত করার বৃহত্তর ক্ষমতা রয়েছে। নতুন কৌশল ও নির্ভুল অস্ত্রের সাহায্যে আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সহিংসতা না করেই সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।’ এগুলো হয়তো গতকাল রোববার ইরানে মার্কিন হামলা চালানোর পর বলা কিছু উক্তি মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়। খবর আলজাজিরার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৩ সালের ১ মে ইরাকে বড় ধরনের অভিযানের সমাপ্তি উপলক্ষে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনে উঠে এই কথাগুলো বলেছিলেন।
বর্তমানে যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাতে লিপ্ত, তখন বিশ্বনেতারা এমন ভাষা ব্যবহার ও উক্তি করছেন, যা খুব পরিচিত শোনাচ্ছে। এসব বক্তব্যে উঠে এসেছে দুই দশকেরও বেশি সময় আগের ইরাক যুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে এক অদ্ভুত তুলনা।
পরিচিত সতর্কবার্তা, অনুরূপ যুক্তি
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তাদের সামরিক হামলার লক্ষ্য ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। অন্যদিকে, ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একই পরিচিত বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়ে এসেছে--ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। ২০০২ সালে তিনি দাবি করেছিলেন, বাগদাদ গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে। একইসঙ্গে তিনি মার্কিন কংগ্রেসকে ইরাকে আক্রমণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এখন দাবি করছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তার ভাষ্য বিশ্বাস করে ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আক্রমণ করে, কিন্তু তারা কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক উসকানিমূলক বক্তব্য ইরানের কথিত পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা ধ্বংস করাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা ইরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করছে। এ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে দীর্ঘ ও বিতর্কিত ইতিহাস রয়েছে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সমর্থিত জোটের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধ ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল, লাখ লাখ ইরাকি নিহত হয়, প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন সৈন্য নিহত হয় এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত আরও গভীর হয়, দেশটিতে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে সেই আক্রমণের পথ তৈরিকারী অযাচিত দাবিগুলো এখন আবারও বেশ পরিচিত বলেই মনে হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র রয়েছে। যেমনটি এখন ইসয়ায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বোঝানোর চেষ্টা করছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে। এটিও হয়তো ইরাকের মতোই মিথ্যা প্রমাণিত হবে, তবে ততদিনে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ইরানকে।