যুক্তরাষ্ট্রে ৪ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতির গ্রেপ্তার

চার মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩৩ কোটি রুপি) রিয়েল এস্টেট প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ টেক্সাসে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিধার্থ "স্যামি" মুখার্জি ও তার স্ত্রী সুনীতা মুখার্জিকে একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, এই দম্পতি ১০০-রও বেশি ব্যক্তিকে ভুয়া রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করাতে প্ররোচিত করেছেন। খবর এনডিটিভির।
প্রতারণার অভিযোগে বলা হয়েছে, মুখার্জি দম্পতি নিজেদের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তুলে ধরে সমাজে আস্থা অর্জনের জন্য দাতব্য অনুষ্ঠান, গ্ল্যামারাস পার্টি এবং বলিউড ধাঁচের পারফরম্যান্স আয়োজন করতেন। কিন্তু বাস্তবে এই উজ্জ্বল জীবনযাত্রা ছিল শুধুই প্রতারণা আড়াল করার মুখোশ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তারা প্রকৃত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করছেন ভেবে টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু একপর্যায়ে দেখা যায় ডিভিডেন্ড চেক বাউন্স করতে শুরু করেছে। সেশু মাদাভভুশি নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমার আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কখনও কল্পনাও করিনি এমন প্রতারণার শিকার হবো।”
আরেকজন ভুক্তভোগী টেরি পারভাগা বলেন, “তারা আপনাকে বিশ্বাস করাবে যে তারা খুবই সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা আপনার শেষ পয়সাটাও নিয়ে নেবে।”
কীভাবে ধরা পড়ল প্রতারণা?
প্রথম দিকে একাধিক পুলিশ বিভাগ এই অভিযোগগুলোকে সাধারণ বেসরকারি আর্থিক বিরোধ হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু ইউলেস পুলিশ বিভাগের হোয়াইট-কলার ক্রাইম তদন্তকারী ব্রায়ান ব্রেনান ২০২৪ সালে একটি দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন, যাঁরা দাবি করেছিলেন যে তারা ৩ লাখ ২৫ হাজার ডলার (প্রায় ২.৭ কোটি রুপি) হারিয়েছেন।
তদন্তে উঠে আসে, ওই দম্পতি বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলার জন্য ডালাস হাউজিং অথরিটির (ডিএইচএ) নামে ভুয়া কনট্রাক্ট ও ইনভয়েস তৈরি করতেন। কিন্তু পুলিশ যখন সরাসরি ডিএইচএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন স্পষ্ট হয় যে প্রকল্পগুলো আদৌ অস্তিত্বই রাখে না।
প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে জাল কাগজপত্র, রসিদ এবং ইমেইল ব্যবহার করতেন বলে এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিস্তৃত জালিয়াতি ও এফবিআই তদন্ত
এই প্রতারণা কেবল একটি প্রকল্পে সীমাবদ্ধ ছিল না। তদন্তে জানা গেছে, দম্পতি আরও ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে এবং ভুয়া কর্মীদের তথ্য দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেচেক প্রোটেক্ট প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর আওতায় সরকারি ঋণ গ্রহণ করেছেন।
তারা বয়স্কদেরকেও টার্গেট করতেন, তাদের ফোন করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে পুলিশের নামে টাকা পাঠাতে বলতেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ব্রেনান বলেন, “স্যামি মুখার্জি আমার ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কৌশলী প্রতারক। তার প্রতারণার শিকড় চারদিকে বিস্তৃত।”

ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
সিধার্থ ও সুনীতা মুখার্জির বিরুদ্ধে প্রথম-ডিগ্রি ফৌজদারি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে, যার শাস্তি হতে পারে ৫ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। ৫ লাখ ডলার জামিনে মুক্তির পর স্যামি মুখার্জিকে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে ফোর্ট ওয়ার্থের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
তাদের অভিবাসন স্ট্যাটাস নিয়েও জটিলতা রয়েছে। জানা গেছে, স্যামি মুখার্জির বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ে পুরনো জালিয়াতির মামলাও রয়েছে। পূর্বে যোগাযোগ করা হলে মুখার্জি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন, “এইসব আমার বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত ষড়যন্ত্র, যা ঈর্ষাবশত করা হচ্ছে।”