থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে তীব্র গোলাবর্ষণ, নিহত ১৬

দীর্ঘ এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়া। আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) টানা দ্বিতীয় দিনের মতো উভয় দেশ একে অপরের ওপর ভারী গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। খবর রয়টার্সের।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকেই থাইল্যান্ডের উবন রাতচাথানি ও সুরিন প্রদেশে সংঘর্ষ শুরু হয়। কাম্বোডিয়ার বাহিনী রাশিয়ান-নির্মিত বিএম-২১ রকেট লঞ্চার এবং ভারী কামান ব্যবহার করেছে বলে জানানো হয়।
এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনী জানায়, “কাম্বোডিয়ান বাহিনী ধারাবাহিকভাবে ভারী গোলাবর্ষণ করছে, যা ফিল্ড আর্টিলারি ও বিএম-২১ রকেট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। থাই সেনারা পরিস্থিতি অনুযায়ী পাল্টা জবাব দিচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার একটি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্তত ছয়টি স্থানে। প্রায় ১৩০ মাইল (২০৯ কি.মি.) দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর এই সংঘর্ষ শুরু হয়, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। উভয় দেশই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
সংঘর্ষের আগে বুধবার রাতে থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়ায় নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয় এবং কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে একজন থাই সেনার পা হারানোকে কেন্দ্র করে এই কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে ওঠে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করে, মাইনটি সম্প্রতি কাম্বোডিয়ার সেনারাই পুঁতে রেখেছিল। তবে কাম্বোডিয়া এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন ৪৬ জন, এর মধ্যে ১৫ জন সেনা।

অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ার ওড্ডার মেঞ্চি প্রদেশের প্রশাসনিক মুখপাত্র মেথ মিয়াস ফেকডি জানিয়েছেন, একটি শিশুসহ একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সীমান্তে মোতায়েন করে, যার মধ্যে একটি বিমান কাম্বোডিয়ার একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এটি ছিল সাম্প্রতিক সময়ে বিরল এক ‘কমব্যাট মোবিলাইজেশন’। কাম্বোডিয়া একে "উন্মত্ত ও নিষ্ঠুর সামরিক আগ্রাসন" বলে উল্লেখ করেছে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থার মতে, থাইল্যান্ডের কাছে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম থাকায় দেশটির সামরিক শক্তি কাম্বোডিয়ার তুলনায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ডের দীর্ঘকালীন মিত্র। এক বিবৃতিতে দুই পক্ষকে "তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের" আহ্বান জানিয়েছে।

আসিয়ানের চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, তিনি দুই দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ অনুসরণে উৎসাহিত করেছেন।
এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি বলেন, “আমি ব্যাংকক ও নমপেন দু'পক্ষ থেকেই ইতিবাচক সঙ্কেত পেয়েছি। আসিয়ান ঐক্য ও যৌথ দায়িত্বের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”