নিষেধাজ্ঞার জেরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ইরানের

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ইরান যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তিন ইউরোপীয় দেশ এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করার পরই এই পদক্ষেপ নিল তেহরান। খবর আলজাজিরার।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বাতিলকৃত প্রস্তাব পুনর্বহালের জন্য তিনটি ইউরোপীয় দেশের দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপের পর জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতদের তেহরানে তলব করা হয়েছে।’
রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল বিলম্বিত করতে ব্যর্থ হওয়ার একদিন পরই ইরান এই পদক্ষেপ নিল, কারণ তাদের খসড়া প্রস্তাবকে মাত্র চারটি দেশ সমর্থন করেছিল। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পথ খুলে যায়।
স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ই৩ দেশগুলো এক মাস আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ‘স্ন্যাপব্যাক’ বা স্বয়ংক্রিয় পুনর্বহালের ঘড়ির কাঁটা নির্ধারণ করেছিল। রোববার ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক, ব্যাংকিং ও জাহাজ শিল্পে সহযোগিতার ওপর বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কায় ইরানের জাতীয় মুদ্রা রিয়াল শনিবার সর্বকালের সর্বনিম্নে নেমে আসে।
পশ্চিমা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : গত কয়েকদিনে পশ্চিমা শক্তিগুলো স্ন্যাপব্যাক স্থগিত করার জন্য কমপক্ষে দুটি ইরানি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
রাশিয়ার অবস্থান : ইরানের শীর্ষ অংশীদার মস্কো, এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপকে ‘অকার্যকর’ বলে মনে করে।
ইসরায়েলের চাপ : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্ন্যাপব্যাকে কোনো বিলম্ব না করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আবারও আঘাত হানার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান অঙ্গীকার করেছেন, ইরান কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না। তিনি বলেন, তার মতে, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধর্মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে উৎখাত করার জন্য চাপ ব্যবহার করতে চাইছে, তাই কোনো চুক্তিতে পৌঁছানোর কোনো কারণ নেই।
পেজেশকিয়ান আরও অভিযোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যাতে তারা কোনো আপোষে পৌঁছাতে না পারে। তিনি ইউরোপীয়দের ‘খারাপ বিশ্বাস’-এর অভিযোগে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা ২০১৫ সালের চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ অবশ্য দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে আঘাত করতে চায় না, তারা আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তবে তিনি স্ন্যাপব্যাককে ‘যা ঘটছে তার সঠিক ওষুধ’ বলে মনে করেন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, এই সপ্তাহে ইরানি স্থাপনাগুলোতে কিছু পরিদর্শন পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে ইরানের পারমাণবিক প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি সংস্থাটির সমালোচনা করেছেন কারণ এটি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আইআরজিসি শনিবার বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহসহ সিনিয়র আইআরজিসি কমান্ডারদের হত্যার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিবৃতি জারি করেছে। অন্যদিকে, পেজেশকিয়ান সতর্ক করেছেন, নামহীন শক্তিগুলো ‘অঞ্চলকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি ভাসাভাসা অজুহাত খুঁজছে’, তবে তিনি জানিয়েছেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি ত্যাগ করে প্রতিশোধ নেবে না।