যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা চায় হামাস, আলোচনায় অগ্রগতি

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আলোচনায় হামাস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ ও পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চায়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৭ অক্টােবর) মিশরের শার্ম আল-শেখে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়।
একই দিন হোয়াইট হাউসে যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ট্রাম্প বলেন, “গাজা চুক্তির একটি বাস্তব সম্ভাবনা আছে।” তিনি জানান, আলোচনা বুধবারও (৮ অক্টােবর) চলবে এবং এতে যুক্ত হবেন যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। খবর আল জাজিরার।
হামাসের শীর্ষ নেতা ফাওজি বারহুম বলেন, “আমাদের দাবি যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং দখলদার বাহিনীর গাজা থেকে পূর্ণ প্রত্যাহার।” তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সেনা প্রত্যাহারের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাস কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ধাপে ধাপে বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করতে চায় হামাস। মঙ্গলবারের আলোচনায় বন্দি মুক্তির সময়সূচি ও সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্র নিয়ে আলোচনা হয়।
হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেন, “আমরা দখলদারদের বিশ্বাস করি না এক সেকেন্ডের জন্যও। আমরা চাই প্রকৃত নিশ্চয়তা যে যুদ্ধ শেষ হবে এবং পুনরায় শুরু হবে না।” তিনি ইসরায়েলকে দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে বলেন, “এটি আমাদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই।” তিনি বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত থামবে না — সব বন্দির মুক্তি, হামাস শাসনের অবসান এবং গাজা যাতে আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা।”
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীরা “স্থিতিস্থাপকভাবে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে।” তিনি জানান, বুধবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জ্যারেড কুশনার ও স্টিভ উইটকফসহ অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীরা মিশরে যোগ দেবেন।

আনসারি বলেন, “এই অংশগ্রহণই প্রমাণ করে, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর।”
চুক্তি হলেও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও পুনর্গঠন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন, হামাস গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে থাকবে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা পরিচালনা করবে “প্যালেস্টাইনি টেকনোক্র্যাটদের” একটি দল, যারা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে “বোর্ড অব পিস”-এর অধীনে কাজ করবে। এই বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক হবেন ট্রাম্প ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
হামাসের ফাওজি বারহুম বলেন, “আমরা চাই যুদ্ধ শেষের সঙ্গে সঙ্গে পুনর্গঠন শুরু হোক এবং তা পরিচালনা করুক একটি জাতীয় প্যালেস্টাইনি সংস্থা।” তিনি আরও জানান, যুদ্ধ শেষে গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে হামাস অংশ নেবে না।
আলোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান নতুন করে হামলা চালায়। সাবরা, তাল আল-হাওয়া ও শাতি ক্যাম্পের আশপাশে বোমা বর্ষণে অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা।
শুক্রবার ট্রাম্পের বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বানের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১০৪ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৬০০ জনে, যার মধ্যে বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি বলেন, “শান্তি চুক্তির আশায় সবাই অপেক্ষা করছে, কিন্তু বোমা এখনও পড়ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত পর্যবেক্ষক সংস্থা এসিএলইডি জানায়, দুই বছরে গাজায় ১১ হাজারের বেশি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং অন্তত ৬ হাজার ২৫০টি গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালে ১ হাজার ৭০১ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।