পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত সত্ত্বেও শান্তি চায় আফগানিস্তান : দিল্লিতে মুত্তাকি

সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তানসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক ও শান্তি চায় আফগানিস্তান। আজ রোববার (১২ অক্টোবর) ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান। খবর এনডিটিভির।
এনডিটিভির নারী সাংবাদিক গৌরী দ্বিবেদীর এক প্রশ্নের জবাবে মুত্তাকি বলেন, সীমান্ত সংঘাত সত্ত্বেও আফগানিস্তান বিশ্বাস করে পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ শান্তিপ্রিয়। পাকিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু যেহেতু আমাদের সীমান্ত রক্ষার প্রশ্ন জড়িত, ফলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছি।
এর আগে আফগানিস্তান দাবি করে, শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতভর ভূখণ্ড ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তে অভিযানে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও পাকিস্তান সরকার এই সংখ্যাকে অনেক কম দেখিয়ে ২৩ জন সেনা নিহত হওয়ার কথা জানায়। তাদের দাবি অনুযায়ী এই সংঘাতে প্রায় ২০০ তালেবান সেনা নিহত হয়েছে।
মুত্তাকি আরও যোগ করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মিত্র দেশ কাতার ও সৌদি আরব অনুরোধ করেছে। তিনি নিশ্চিত করেন, সীমান্ত পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। আলোচনার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য একই শান্তি কামনা করে।
প্রথম সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বিতর্ক
এর আগে গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) মুত্তাকির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিকের উপস্থিতি না থাকায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিরোধীরা এই ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য এবং নারীর প্রতি অপমান বলে মন্তব্য করে।
তালেবান মন্ত্রী বিষয়টি নিছক একটি ভুল বোঝাবুঝি বলে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনটি খুব কম সময়ের নোটিশে আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে নির্দিষ্ট কয়েকজন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
নারী অধিকার প্রসঙ্গে সমালোচনার জবাবে মুত্তাকি বলেন, আমাদের বিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটগুলোতে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন নারী ও মেয়েসহ মোট ১০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী রয়েছে। মাদ্রাসায়ও গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত শিক্ষা চলছে। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু আমরা কখনো নারীর শিক্ষাকে ধর্মীয়ভাবে ‘হারাম’ ঘোষণা করিনি। এটি কেবল পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাবুল প্রশাসন আফগান নারীদের অধিকার সীমিত করার কারণে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে রয়েছে।
তালেবান নেতা মুত্তাকি তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে দিল্লির আফগান দূতাবাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বলেন, এটি আমাদের পতাকা। আমরা এর অধীনেই জিহাদ করেছি। এটি শতভাগ আমাদের দূতাবাস।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে মুত্তাকি জানান, বাণিজ্য, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, বিমান যোগাযোগ এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত বাণিজ্য ভিসা, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং স্থগিত থাকা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো পুনরায় শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে।
মুত্তাকি নতুন বিমান সংযোগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যার মধ্যে দিল্লি-কাবুল, মুম্বাই-কান্দাহার এবং অমৃতসর-আফগানিস্তান ফ্লাইট রুট অন্তর্ভুক্ত। তিনি আফগান পণ্য পরিবহণের জন্য আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেন। এছাড়া, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি যৌথ বাণিজ্য কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দেন। খনিজ সহযোগিতা, কৃষি প্রকল্প ও ক্রীড়া কূটনীতি নিয়ে আলোচনার কথা জানান।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ আফগান নেতা ভারত সফর করেন।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগান কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের ভেতরে মারাত্মক হামলা চালায়। তবে কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা অন্য দেশের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয় না। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই সংঘাতের নিন্দা জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের উস্কানির যোগ্য জবাব দিয়েছে। তাদের বেশ কয়েকটি পোস্ট ধ্বংস করে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে।