গাজা সিটিতে সংঘর্ষে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই গাজা সিটিতে সংঘর্ষের সময় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক গাজার সাবরা এলাকায় সংঘর্ষ কাভার করার সময় একটি “সশস্ত্র মিলিশিয়া”র গুলিতে নিহত হন। যুদ্ধ চলাকালে তার তৈরি ভিডিও ও প্রতিবেদনগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। খবর আল জাজিরার।
আল জাজিরার সানাদ এজেন্সি একাধিক সাংবাদিক ও কর্মীদের প্রকাশিত ভিডিও যাচাই করে দেখেছে, যেখানে সালেহকে “প্রেস” লেখা জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় একটি ট্রাকের পেছনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি রোববার (১২ অক্টােবর) সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই সময় সাবরা এলাকায় হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও দোগমুশ গোত্রের যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখনও এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, সংঘর্ষে “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত এক সশস্ত্র মিলিশিয়া” জড়িত ছিল। তিনি জানান, নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় অবরোধ আরোপ করে এবং মিলিশিয়া সদস্যরা দক্ষিণ গাজা থেকে ফেরা কয়েকজন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিকেও হত্যা করে।
যুদ্ধবিরতির পরও গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও নাজুক বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে।
গত জানুয়ারিতে আল জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সালেহ বলেছিলেন, “গত ৪৬৭ দিনের যেসব ভয়ঙ্কর দৃশ্য ও পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি, তা কোনোদিন ভুলতে পারব না। এসব স্মৃতি সারাজীবন থেকে যাবে।”
সালেহ আরও জানান, সাংবাদিকতার কারণে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন।
সালেহ বলেন, “আমি প্রতি সেকেন্ডে ভয় নিয়ে বেঁচেছি। ইসরায়েলি দখলদাররা আমার সম্পর্কে যা বলছিল, তা শুনে মনে হতো—পরের মুহূর্তেই হয়তো মারা যাব।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ সাংবাদিকদের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৭০-রও বেশি সাংবাদিক গাজায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে, বর্তমান যুদ্ধবিরতি টানা তৃতীয় দিনে বজায় রয়েছে। সোমবার (১৩ অক্টােবর) মিশরের শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত হবে গাজা শান্তি সম্মেলন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্মেলনে “গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে” একটি ঐতিহাসিক দলিল স্বাক্ষরিত হবে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক