দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার যন্ত্রণার বর্ণনা দিল ফিলিস্তিনি তরুণ

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল আরোপিত অবরোধ ও দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্য সংকট এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। বোমার আঘাতে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা এখন ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন (ডিসিআইপি) তেমনি এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রকাশ করেছে ১০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ছেলে আহমেদকে নিয়ে। যুদ্ধবিরতির সুযোগে সে তার পরিবারের সঙ্গে গাজায় ফিরেছিল, কিন্তু সেখানে তার অভিজ্ঞতা আরও বেদনাদায়ক। খবর আলজারিরার।
আহমেদ জানিয়েছে, গাজার অসংখ্য পরিবারের মতো তার পরিবারও চরম সংকটে, যেখানে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। খাবার পাওয়ার শেষ আশায় সে ছুটছিল একটি কমিউনিটি রান্নাঘরের দিকে।
ক্ষুধার্ত মানুষের সেই ভিড় বর্ণনা করতে গিয়ে ছোট্ট আহমেদ জানায়, জায়গাটি লোকে ভরে গিয়েছিল। সেখানে প্রচুর মানুষ কিছু মসুর ডাল সংগ্রহের জন্য ভিড় করেছিল। এই হাহাকার কেবল মসুর ডাল বা খাবারের জন্য নয়, এটি ছিল বেঁচে থাকার জন্য মানুষের শেষ লড়াই। (জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন চরম ক্ষুধায় ভুগছে এবং এই অপুষ্টিজনিত কারণে ইতোমধ্যে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।)
খাবার সংগ্রহের সেই মরিয়া চেষ্টার সময়ই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আহমেদ জানায়— হঠাৎ মসুর ডাল পরিবেশনকারী ব্যক্তিটি দুর্ঘটনাক্রমে পাত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে, যার ফলে গরম মসুর ডাল আমার পিঠে ছড়িয়ে পড়ে, যা আমাকে যন্ত্রণাদায়কভাবে পুড়িয়ে দেয়।

গরম মসুর ডালের তীব্র যন্ত্রণাতেও আহমদ সেখান থেকে সরে আসেনি। তার কাছে এই কষ্ট হয়তো ক্ষুধার কষ্টের চেয়েও বেশি কিছু ছিল না।
আহমদ অসহায়ভাবে স্বীকার করে, এত কষ্ট সত্ত্বেও খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। তার সরল স্বীকারোক্তিটি গাজার লাখ লাখ মানুষের বেদনার প্রতিচ্ছবি— সে বলে ‘ক্ষুধার জ্বালায় আমার শরীর ক্লান্ত।’
আহমেদের এই ঘটনা প্রমাণ করে, গাজার শিশুরা এখন শুধু ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার নয়, তারা ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত এক দুর্ভিক্ষের শিকার।