আদানিকে রক্ষায় মোদির ৪৮ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পরিকল্পনা
ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির জন্য এবার সরকারি সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগের মুখে থাকা আদানির ব্যবসা সাম্রাজ্যকে বাঁচাতে ভারত সরকার ৩৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের এক বিনিয়োগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এ সংক্রান্ত একটি নথি হাতে পেয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আদানির কোম্পানিতে
নথিতে দেখা যায়, ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস বিভাগ (ডিএফএস), লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি) এবং সরকারি চিন্তাধারা কেন্দ্র নিতি আয়োগ মিলে এই পরিকল্পনা তৈরি করে। এলআইসি হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্য গ্রামীণ ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনবীমা সেবা দেওয়া।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এলআইসি আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার বন্ডে বিনিয়োগ করবে এবং আরও প্রায় ৫১ কোটি ডলারে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাড়াবে। মে মাসে আদানির পোর্টস ইউনিট যখন সাড়ে ৫৮ কোটি ডলারের বন্ড ইস্যু করে, তখন সম্পূর্ণ অর্থায়নও করে এলআইসি — যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে ভারতে।
বিতর্কিত ‘সরকারি আশীর্বাদ’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নথিতে লেখা ছিল, এই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ‘আদানি গ্রুপের প্রতি আস্থা প্রদর্শন’ এবং ‘অন্য বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া’। সমালোচকরা বলছেন, এটি মূলত সরকারি অর্থে এক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা।
মুম্বাইভিত্তিক অর্থ বিশেষজ্ঞ হেমিন্দ্র হাজারি বলেন, ‘এই সরকার আদানিকে সমর্থন করে এবং তার ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হতে দেবে না।’
আদানি গ্রুপ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘এলআইসি বহু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে; কেবল আদানির জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে — এই ধারণা বিভ্রান্তিকর।’
যুক্তরাষ্ট্রে মামলা, ভারতে সমর্থন
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ আদানি, তার ভাতিজা সাগর আদানি এবং আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ঘুষের অভিযোগ আনে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ — মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে বিলিয়ন ডলার তোলা ও ভারতের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে চুক্তি নেওয়া।
একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সিভিল মামলা দায়ের করে। আদানি গ্রুপ অবশ্য এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও রাজনৈতিক প্রভাব
এলআইসি আগেও আদানির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। ২০২৩ সালে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এলআইসি-এর বিনিয়োগমূল্য প্রায় ৫০৬ কোটি ডলার কমে যায়। তবে পরের বছর কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।
ভারতের কংগ্রেস ও বাম দলগুলো এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে, একে ‘জনগণের অর্থের অপব্যবহার’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে নথিতে বলা হয়েছে, ‘আদানি গ্রুপে বিনিয়োগ এলআইসি-এর ম্যান্ডেট ও ভারতের অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর প্রতিচ্ছবি
বিশ্লেষক টিম বাকলি বলেন, ‘এটি ভারতের ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের (ঘনিষ্ঠ সম্পর্কভিত্তিক পুঁজিবাদ) জীবন্ত উদাহরণ। যখন আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো দূরে সরে যাচ্ছে, তখন সরকার নিজেই এগিয়ে এসে তাকে টিকিয়ে রাখছে।’
তার ভাষায়, ‘যখন সরকারই বারবার তাকে অর্থ দেয়, তখন আদানির নিজের সম্পদ বিক্রি করার প্রয়োজন হয় না। আসলে এই দায়ভার পড়ছে ভারতীয় জনগণের ওপর।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক