মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলন : কারা আসছেন, কী আলোচনা হবে
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আজ রোববার (২৬ অক্টােবর) থেকে মঙ্গলবার (২৮ অক্টােবর) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ান-এর তিন দিনব্যাপী সম্মেলন। এই ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে প্রায় দুই ডজন বিশ্বনেতা যোগ দিচ্ছেন। খবর আল জাজিরার।
আসিয়ান কী এবং কারা সদস্য
আসিয়ান ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে—ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। এদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ কোটি এবং সম্মিলিত জিডিপি ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
এ বছর আসিয়ানে যুক্ত হচ্ছে নতুন সদস্য পূর্ব তিমুর, যা ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
কারা থাকছেন সম্মেলনে
প্রত্যেক আসিয়ান সদস্য দেশের নেতা এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন, তবে মিয়ানমারের কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লাইং উপস্থিত থাকছেন না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা অংশ নিচ্ছেন পূর্ব এশিয়া সামিটে, যা আসিয়ান সম্মেলনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, জাপানের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়াং এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন উপস্থিত থাকছেন।
রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নভাক, আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দেবেন ভার্চুয়ালি।
এছাড়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও কুয়ালালামপুরে থাকবেন।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইএলও ও ফিফার প্রধানরাও কিছু অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামা।
কী কী ঘটবে সম্মেলনে
সম্মেলনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হবে একাধিক বৈঠক। আজ রোববার এক গুরুত্বপূর্ণ শান্তিচুক্তি সই হবে। কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড তাদের সীমান্ত সংঘাতের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তি করবে। এ চুক্তি তদারকি করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই চুক্তি বাস্তব সমাধানের চেয়ে রাজনৈতিক প্রদর্শনী বেশি হতে পারে, কারণ সীমান্তে সহিংসতা এখনও থামেনি।
আলোচনার মূল বিষয়
সম্মেলনে আলোচনা হবে—যুক্তরাষ্ট্রের “লিবারেশন ডে ট্যারিফ” ও বাণিজ্য নীতি, চীনের রেয়ার আর্থ মিনারেল রপ্তানি সীমাবদ্ধতা, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্ক্যাম সেন্টারগুলোর বিস্তার ইত্যাদি নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিতে আসিয়ান দেশগুলোর রপ্তানিতে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা কিছু দেশের জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রেয়ার আর্থ বা উচ্চ-প্রযুক্তি খনিজের রপ্তানি সীমিত করেছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহে প্রভাব ফেলেছে।
মিয়ানমার কেন অনুপস্থিত
২০২১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমারের নেতা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় আগামী বছর আসিয়ানের সভাপতিত্ব করবে ফিলিপাইন।
আসিয়ান ২০২১ সালে “ফাইভ পয়েন্ট কনসেনসাস” নামে একটি শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু সেটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
আসিয়ানের সীমাবদ্ধতা
আসিয়ানকে প্রায়ই সমালোচনা করা হয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বলপ্রয়োগের ক্ষমতা না থাকায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো কোনো বাধ্যতামূলক আইন কাঠামো এখানে নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি আসিয়ানের জন্মকালীন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ফল, যেখানে সদস্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক