জাতিসংঘের সমর্থন পেল গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনা
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য তৈরি করা ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই পরিকল্পনায় গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) প্রতিষ্ঠার কথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খবর বিবিসির।
প্রস্তাবটি ১৩টি দেশ সমর্থন করেছে— যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়ার মতো দেশও আছে। কেউই এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। তবে রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র এই প্রস্তাব গ্রহণকে ‘যুদ্ধবিরতি সুসংহত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তারা মনে করে এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবি পূরণে ব্যর্থ।
প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর টেলিগ্রামে হামাস জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা ‘গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা চাপিয়ে দেবে’, যা ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের রাজনৈতিক দলগুলো কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে সৌদি আরব
প্রস্তাবের অধীনে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) ইসরায়েল ও মিশরের সঙ্গে কাজ করবে। একটি নতুন প্রশিক্ষিত ও যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা সীমান্ত এলাকাগুলো সুরক্ষিত করবে এবং হামাসসহ অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে স্থায়ীভাবে নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত সেখানকার পুলিশ হামাসের কর্তৃত্বে কাজ করেছে।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ কাউন্সিলকে বলেছেন, আইএসএফ ‘এই অঞ্চলটি সুরক্ষিত করার, গাজার নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা করার, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলার, অস্ত্র অপসারণ করার এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাবে।’
নিরাপত্তা পরিষদ বোর্ড অফ পিস নামে একটি অন্তর্বর্তী শাসন সংস্থা গঠনেরও অনুমোদন দিয়েছে। এই সংস্থাটি একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক কমিটির শাসন তত্ত্বাবধান করবে এবং গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা সরবরাহের তত্ত্বাবধান করবে। প্রস্তাব অনুসারে, দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনের জন্য অর্থায়ন বিশ্বব্যাংকের সমর্থিত একটি ট্রাস্ট তহবিল থেকে আসবে।
ট্রাম্প এই ভোটকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আশা করা হচ্ছে তিনি বোর্ড অফ পিস-এর সভাপতিত্ব করবেন।
আগের খসড়াগুলো থেকে ভিন্ন হলেও এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিশ্বাসযোগ্য পথ উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা পরিষদের অনেক সদস্যের দাবির ফল। তবে, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের তীব্র বিরোধিতা করায় ইসরায়েল এই ভবিষ্যতের পথে একটি বড় বাধা তৈরি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং মিশর, সৌদি আরব ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ প্রস্তাবটি দ্রুত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে বলেছে, প্রস্তাবের শর্তাবলি ‘জরুরিভাবে ও অবিলম্বে’ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন : মদিনায় বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষে ৪২ ওমরাহযাত্রী নিহত
রাশিয়া এবং চীন ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রধান কারণ ছিল— ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ আটটি আরব ও মুসলিম দেশ এই প্রস্তাব সমর্থন করেছিল। তবে মস্কো ও বেইজিং উভয়ই প্রস্তাবটির সমালোচনা করে বলেছে, এর মূল প্রক্রিয়াগুলো স্পষ্ট নয় ও এটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই শান্তি পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়— ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও আটক ব্যক্তিদের হস্তান্তর গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়েছিল।
এই সংঘাত শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন বন্দুকধারীদের ইসরায়েলে আক্রমণের পর, যেখানে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। অন্যদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ৬৯ হাজার ৪৮৩ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক