জি-২০ সম্মেলন : কারা আসছেন, কেন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করল
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর বার্ষিক সম্মেলন (জি-২০ সম্মেলন) এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক রাজধানী জোহানেসবার্গে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো আফ্রিকান দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বয়কটের কারণে এবারের বৈঠককে ঘিরে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝড়।
আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) শুরু হওয়া এই সম্মেলনে ৪২টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশগ্রহণ করবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ‘শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যের শিকার’ হওয়ার অভিযোগ তুলে সম্মেলন বয়কট করেছেন। খবর আল জাজিরার।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি জি-২০ সম্মেলনের সভাপতিত্ব মার্কিন প্রতিনিধির জন্য নির্ধারিত খালি চেয়ারের কাছেই প্রতীকী হিসেবে হস্তান্তর করবেন।
ওয়াশিংটন অবশ্য পরে জানিয়েছে—শীর্ষ বৈঠকে না গেলেও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে একজন মার্কিন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকতে পারেন।
এদিকে, সম্মেলন ঘিরে জোহানেসবার্গজুড়ে চলছে সাজসজ্জা, বাড়তি নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিশেষ উদ্যোগ। অন্তত সাড়ে তিন হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে এত বড় আয়োজন নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। একইসঙ্গে জলবায়ু আন্দোলনকারী, নারীর অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভও পরিকল্পিত।
জি-২০ কী?
১৯৯৯ সালে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে গঠিত এই ফোরামটি ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জি-২০ এখন বিশ্বের মোট জিডিপির ৮৫ শতাংশ এবং জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
এ বছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার নাসরেক এক্সপো সেন্টারে-দেড় লাখ বর্গমিটার আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় কনভেনশন সেন্টার।
কারা অংশ নিচ্ছেন?
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন— চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জার্মান চ্যান্সেল ফ্রিডরিখ মের্তস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের মহাসচিবও উপস্থিত থাকবেন।
কেন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করছে?
ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ চলছে বলে দাবি করেছেন—যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে ভুল ও ভিত্তিহীন হিসেবে নাকচ করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন ভূমি সংস্কার আইন পাসের পর ট্রাম্প বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে উসকে দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যও বন্ধ করে দেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তাই কোনো মার্কিন কর্মকর্তা জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবে না।’
রামাফোসা মন্তব্য করেছেন, বয়কট ‘তাদেরই ক্ষতি’ এবং এই সিদ্ধান্ত জি-২০ প্রক্রিয়াকে থামাতে পারবে না।
কারা আসছেন না?
জি-২০ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (তার বদলে লি কিয়াং), রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায়), নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট টিনুবু (দেশে অপহরণ সংকট) ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাওম অংশ নিচ্ছেন না।
আলোচ্যসূচিতে কী আছে?
দক্ষিণ আফ্রিকা এবার জি-২০–তে গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকারগুলোকে সামনে এনেছে।
মূল আলোচ্য বিষয়গুলো হলো— বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন ঋণ সহজ করা, জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থায়ন বাড়ানো, ধনী দেশ থেকে দরিদ্র দেশে জলবায়ু অর্থায়নের প্রবাহ সচল করা, আফ্রিকান দেশগুলোর সম্পদ ও খনিজ আহরণে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
এটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আয়োজন।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
সম্মেলন ঘিরে নানা সংগঠনের বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-
* নারী নিপীড়ন ও ফেমিসাইড বিরোধী আন্দোলন—‘উইমেন ফর চেঞ্জ’–এর জাতীয় শাটডাউনের ডাক।
* জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা–সংক্রান্ত প্রতিবাদ।
* শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সংগঠনের বর্ণবৈষম্য অভিযোগে বিক্ষোভ।
* অভিবাসী-বিরোধী ও বেকারত্ব মোকাবিলায় বিক্ষোভ।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক