কয়েক সপ্তাহেই পরিষ্কার হবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হবে কিনা : ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি এখন যেকোনো সময়ের চাইতে বেশি হাতের নাগালে। তবে যুদ্ধরত দেশ দুটির নেতাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার পরও ভূখণ্ড ছাড়ের মতো জটিল ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতির কথা তিনি জানাননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রায় এক বছরের মেয়াদ শুরুর প্রথম দিনেই ইউক্রেন ইস্যুতে একটি শান্তি চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং এখন তা বন্ধ করা সম্ভব কিনা, তা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।
নতুন নবছর শুরুর আগে চালানো এই ঝটিকা কূটনৈতিক তৎপরতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিয়ে আসেন। সেখানে তারা শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। এর মাত্র একদিন আগে রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আবাসিক এলাকাগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালায়।
গত অক্টোবরে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের শেষ বৈঠকের মতোই, এবারও বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সাম্প্রতিক ওই হামলার পরও ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে জোর দিয়ে বলেন, মস্কো শান্তির ব্যাপারে ‘আন্তরিক’।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবন মার-আ-লাগো এস্টেটের চা পান করার কক্ষে জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সত্যি বিশ্বাস করি, আমরা সব পক্ষকে নিয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কাছাকাছি রয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘সবাই যুদ্ধের অবসান চায়।’
আলোচনার পর জেলেনস্কি ও ট্রাম্প যৌথভাবে ইউরোপের প্রধান নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। রাশিয়ার মনোবল বাড়াতে পারে এমন যেকোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউরোপীয় নেতারা এ সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে জেলেনস্কি জানান, তিনি এবং ইউরোপীয় নেতারা জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে আবারও আসতে পারেন।
এদিকে, চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা প্রকাশ করলেও অগ্রগতির বিষয়ে কিছু বলেননি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এ সময় তিনি তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেন, ভূখণ্ড নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েই গেছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে, পূর্ব ডনবাস যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই থামিয়ে একটি অসামরিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘এটি এখনও অমীমাংসিত, তবে আমরা অনেক কাছাকাছি আসছি। এটি একটি খুব কঠিন বিষয়, তবে আমি মনে করি এর সমাধান হয়ে যাবে।’
ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে উৎসাহিত করতে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও জেলেনস্কি তাতে দ্রুত স্বাগত জানান। জেলেনস্কিও সংশোধিত মার্কিন পরিকল্পনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন, যা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কিয়েভের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত। তবে যেকোনো চুক্তির স্বাক্ষরের জন্য ইউক্রেনের ভোটারদের গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হবে।
অন্যদিকে, রাশিয়া কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেয়নি। গত চার বছরে ইউক্রেনের শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধীরগতিতে হলেও যেটুকু সাফল্য তারা পেয়েছে, তাতে তারা আশাবাদী। পুতিন ও ট্রাম্পের আলোচনার পর ক্রেমলিন থেকে কিয়েভকে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নিতে এবং অবিলম্বে ডনবাস থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় নেতাদের শান্তির পথে বাধা হিসেবে চিত্রিত করেছে রাশিয়া।
ট্রাম্পের উপদেষ্টারা আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোর মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। এর অর্থ হলো—রাশিয়া যদি পুনরায় আক্রমণ করে, তবে জোটের সদস্যরা সামরিকভাবে তার জবাব দেবে। জেলেনস্কি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামোর ৯০ শতাংশ একমত হওয়া গেছে এবং মার্কিন-ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে ১০০ শতাংশ একমত। তবে রাশিয়া এই দেশটির ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে শুরু থেকেই কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক