তুলির চোখে শরৎ
বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি শেষ হতেই শরৎ প্রকৃতিতে ঢুকে পড়েছে। আকাশ গাঢ় নীল, তাতে শুভ্র সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। এ সময় শিউলি ফোটে, তাল পাকে আর নদীর ধারে ফোটে কাশফুল। রোদ, হাওয়া, নীল আকাশ, কাশফুল ইত্যাদি প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে। এ এক অপরূপ দৃশ্য।
শরৎকালে পাখিরা নতুন জীবন পায়। বাসা বানায়। ঘর বাঁধে। কিচিরমিচির শব্দে গান গায়।
দাদার বাড়িতে নারকেল গাছে বাবুই পাখির বাসা দেখে তুলি অবাক হয়ে যায়। কত সুন্দর করে তারা বাসা বেঁধেছে।
তুলির সাথে গল্প করতে করতে দাদু বলেন, জোনাকি পোকা ধরে রাতে ওরা বাসা আলোকিত করে। তাদের চিকচিক আলোতে চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়। ঝিঁ ঝিঁ শব্দে মনে হয় ছন্দ মিলিয়ে নাচছে তারা। গ্রামে গাছে গাছে এখন তাল, জাম্বুরা, আমড়া আর চালতা ফল। বাড়ির উঠান, মাচা সবজিতে ভরা। মাঠে মাঠে কচি ধানের ছড়া।
তুলি যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয়। দাদুর গল্প শেষ হলেই তুলি মায়ের কাছে আসে।
শরতের সঙ্গে তারুণ্যের সম্পর্কটা একটু অন্য রকম। এ সময়ের পোশাকের নীলের আধিক্যই যেন একটু বেশি চোখে পড়ে। তেমনই তুলি তার মাকে নীল শাড়ি পরতে দেখে বলে, আম্মু কোথায় যাবে? এই তো একটু কাশফুল বনে হারিয়ে যাব।
এ মা, আমাকে নেবে না?
তা কি হয়, আমার মা আমার সাথেই যাবে।
তবে আমায় নীল জামা পরিয়ে দাও।
তুলির মা হাতে সাদা চুড়ি আর কপালে লাল টিপ পরে নিল। আর মেয়েকে নীল জামা পরিয়ে মাথায় সাদা ফুল গুঁজে দিল। তুলির মা বলে, জানো তো এখন শরৎকাল। তাই নীলে নীল আমরা।
ইস, তোমার আগে জানি আমি।
তাই বুঝি?
দাদু বলেছে।
সত্যিই এই ঋতুর তুলনা হয় না তুলি। স্বচ্ছতা আর শুভ্রতা মেশানো ঋতু শরৎ। এ ঋতুতে যেন সবই রয়েছে। শরৎ রোদের তেজ কমায়, বৃষ্টির আসা-যাওয়া কমে। হিমেল বাতাসের স্পর্শ ঘিরে থাকে এ ঋতু। তাই তো শরৎকে ঋতুর রানি বলে।
ওমা রানি?
হুম। এ কথা বলেই তুলির মা রবীন্দ্রসংগীত জুড়ে দেয়।
‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলারে ভাই লুকোচুরি খেলা’— জনপ্রিয় এই রবীন্দ্রসংগীতই শরতের রূপ বর্ণনায় যথেষ্ট। কবিগুরুর ভাষায়, ‘তুলি মেঘভার আকাশে তোমার করেছ সুনীল বরণী/ শিশির ছিটায়ে করেছ শীতল/ তোমার শ্যামল ধরণী।’
শরৎকালে অনেক ফুল ফোটে, তার মধ্যে কী কী রয়েছে জানো?
কী কী?
শেফালি, হিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, পাখিফুল, পান্থপাদপ, বকফুল, মিনজিরি। কেবল তা-ই নয়, শরতের রূপের অংশ হয় শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, ছাতিম ফুল, বড়ই ফুল, দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, সহ নানা রকমের ফুল। ফুলের সুবাস আর পাখির কুজনে মুখর হয় গ্রামের মাঠ-ঘাট-জনপদ।
বাহ! আম্মু কী আনন্দ; আমরা খুব সুন্দর একটি ঋতুতে গ্রামে বেড়াতে এসেছি আর কত কিছু জানতে পারছি।
একদম ঠিক বলেছ।
মা-মেয়ে আবারও একসাথে সেই রবীন্দ্রসংগীত গুনগুন করে কাশফুলের বনে হারিয়ে যায়।