আমলাতন্ত্রকে একটি দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আমলাতন্ত্রকে কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই অভিযোগ করেন। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ’ এর উদ্যোগে শহীদ জেহাদের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমলাতন্ত্রকে কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটাকে আমরা (বিএনপি) কোনোমতেই বরদাশত করবো না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচনের সময়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র থাকতে হবে, সরকার থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অর্থাৎ কোনো দলের কোনো প্রচারণাকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেগুলো বিবেচনা করে, বিশেষ করে বর্তমান সরকারকে আবারও বলতে চাই, একদম নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন। অন্যথায়, আমরা সেটা মেনে নেবো না, এই দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।”
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জুন মাসে আমাদের নেতা তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব নিজেদের মধ্যে আলোচনা পরে নির্বাচনের যে সময় নির্ধারণ করেছেন সেই সময়েই মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না।”
বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচারে লাভ হবে না
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশ গড়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান প্রতিটি ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন সেইভাবে আজকে আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাদের কাছে এই মুহূর্তে নেই। তিনি সুদূর আট হাজার মাইল দূর থেকে আমাদেরকে উজ্জীবিত করেছেন প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি মানুষকে… তিনি ঘরে ঘরে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, ‘জাগো বাংলাদেশের মানুষ জাগো, নিজের অধিকারকে আদায় করে নাও।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা সেই অধিকার আদায়ের পথে….এই পথ বাধাগ্রস্থ করছে অনেকেই। বিভিন্ন রকমের গুজব চলছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সংস্কার আমরা এনেছি, আমরাই করবো এবং সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া এটা চলতেই থাকবে। সুতরাং তার সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে অযথা মিথ্যা প্রচার করে লাভ হবে না।”
বিএনপির ধানের শীষকে নিয়ে টানাটিানি কেন?
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে সংবাদপত্রে দেখলাম, কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল তারা ধমক দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছে যে অমুক মার্কা না দিলে আমরা নির্বাচনে যাবো না বা অমুকের মার্কা থাকতে পারবে না। ভাই, আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দেইনি। কোন মার্কা তোমাদেরকে দেবেন সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা বলি নাই যে, তোমাদেরকে এই মার্কা দেওয়া যাবে না। তাহলে অযথা বিএনপির ধানের শীষকে নিয়ে টানাটানি কেন? টানাটানি এজন্যে যে, ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য, ধানের শীষকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। গ্রামে-গঞ্জে সবখানে একটাই শ্লোগান উঠেছে… বাংলাদেশে ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য। ওই জন্যে ওটা রুখতে হবে, ওইটা আটকিয়ে দিতে হবে। কারণ ধানের শীষ টিকে গেলে ওই যে বাংলাদেশের শত্রুরা আছে, সেই শত্রুরা তাদের সমস্ত চক্রান্ত থেকে পরাজিত হয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা এমনিতেই পালিয়ে দিল্লি যায় নাই, যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ আমরা সেই গ্রাউন্ড তৈরি করেছি, আমরা সেই ভিত্তি তৈরি করেছি… দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রাম নিয়ে বুকের রক্ত দিয়ে লড়াই করে সেই গ্রাউন্ডটা আমরা তৈরি করেছি। কেউ যদি আমাদেরকে প্রশ্ন করে, এই কথাটুকু স্পষ্ট করে বলতে পারবেন, জোরে বলবেন, গণতন্ত্র আমরা এনেছি, সংস্কার আমরা এনেছি। এই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবো আমরাই এবং এর জন্যে প্রয়োজন হলে আবারো বুকের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র রক্ষা করবো।”
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুর রহমান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খন্দকার লুৎফর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, কামরুজ্জামান রতন, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফ আহমেদ জুয়েল, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ, শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমূখ বক্তব্য দেন।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন জেহাদ। এরপর থেকে এ দিবসটিকে বিএনপি জেহাদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর ছাত্রদল নেতা জেহাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। জেহাদের লাশ ছুঁয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতারা শপথ নেন স্বৈরাচার এরশাদকে হঠানোর। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন এরশাদ।
‘জেহাদ দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার সকালে রাজউক এভিনিউয়ের জেহাদ স্কয়ারে স্মৃতিস্তম্ভে আমান উল্লাহ আমানসহ নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।