ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে হলিউডের যত তারকাদের গল্প
৯০ বছর বয়সে শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিউবার ‘লিডার ম্যাক্সিমো’ বলে পরিচিত ফিদেল কাস্ত্রো। নিজের সংগ্রামী জীবন আর অনন্য সব অর্জনের মাধ্যমে কাস্ত্রো হয়ে উঠেছিলেন দুনিয়াজোড়া অজস্র মানুষের অনুপ্রেরণা। মানবাধিকারের জন্য লড়াই তাঁকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। এমন মানুষের জনপ্রিয়তা হলিউডে থাকবে না, তা কি হয়! জীবদ্দশায় তাঁর সাথে দেখা হয়েছিল অলিভার স্টোন, জ্যাক নিকলসন থেকে শুরু করে স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো হলিউডের অনেক রথী-মহারথীর। নানা সময়ে তাঁর প্রশংসা করেছেন আরো অনেক তারকা। ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে হলিউডের এই নানা ধারার সম্পর্কগুলো নিয়ে থাকছে এই আয়োজনে।
স্টিভেন স্পিলবার্গ : কিউবান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের এর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ২০০২ সালে কিউবায় যান বিখ্যাত হলিউড পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ, যেখানে এক ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখানো হয় স্পিলবার্গের বেশ কিছু সিনেমা। কিউবা যাবেন আর এই কিংবদন্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন না! স্পিলবার্গও ছাড়েননি সেই সুযোগ। দেখা করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে।
জ্যাক নিকলসন : ১৯৯৮ সালে এই দ্বীপরাষ্ট্রে একবার যাওয়ার সুযোগ হয় অভিনেতা জ্যাক নিকলসনের। আর সাথে বোনাস হিসেবে পাওয়া ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎ। ওই সময় বিখ্যাত সাময়িকি ভ্যারাইটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক বলেন, ‘তিনি সত্যিকার অর্থে একজন জিনিয়াস। আমরা অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছিলাম।’
জ্যাক লেমন : ২০০১ সালে ‘সাম লাইক ইট হট’, ‘দ্য অ্যাপার্টমেন্ট’ সিনেমার অভিনেতা জ্যাক লেমনে মৃত্যুর পর এক বিবৃতি প্রকাশ করে তৎকালীন কিউবান সরকার। বিবৃতিতে লেমনকে ‘কিউবার একজন সত্যিকার বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অলিভার স্টোন : ২০০৩ সালে ফিদেল কাস্ত্রোকে নিয়ে স্টোনের নির্মাণ করা ডকুমেন্টারি ‘কমান্দান্তে’ প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়ে। যদিও তাতে একটুও দমে যাননি অলিভার স্টোন, বরং ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন কাস্ত্রোর। তিনি বলেন, ‘কাস্ত্রো একজন নির্লোভ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ। পৃথিবীর অন্যতম জ্ঞানীদের একজন তিনি।’
কেভিন কস্টনার : ২০০১ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর জন্য নিজের সিনেমা ‘থার্টিন ডেইজ’-এর এক ব্যক্তিগত প্রদর্শনী আয়োজন করেন কেভিন কস্টনার। যেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে কস্টনার বলেন, ‘এইরকম একজন লোকের কয়েক ফুট দূরত্বে বসতে পারাটা এবং তাঁর তারুণ্যকে আবার তাঁর সামনে পর্দায় দেখানো আজীবনের অভিজ্ঞতা।’
নাওমি ক্যাম্পবেল : ফিদেল কাস্ত্রোকে সরাসরি দেখে নাকি রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়েছিলেন এই সুপার মডেল। ১৯৯৯ সালে তিনি এবং কেইট মস দেখা করেন এই কমিউনিস্ট নেতার সাথে। নাওমির কথা, ‘আমি এত নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম যা বোঝানো যাবে না! বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেন যে আমাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারটা বেশ আধ্যাত্বিক ছিল তাঁর কাছে’— টরোন্টো স্টার’কে এমনটাই বলেন ক্যাম্পবেল।
রবার্ট রেডফোর্ড : ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে একাধিকবার দেখা হয় রবার্ট রেডফোর্ডের। ২০০৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের এক উদ্ধৃতিতে বলা হয়, “রেডফোর্ড তাঁর ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরিজ’ সিনেমার এক ব্যক্তিগত প্রদর্শনীর জন্য কিউবা যান। ওই প্রদর্শনীটি ছিল মূলত কাস্ত্রোর কিংবদন্তি ‘কমরেড-ইন-আর্মস’ আর্জেন্টাইন হুয়ান আলমেইদা বস্কের বিধবা স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য। ঘটনাক্রমে সেখানকার ‘হোটেল নাসিওনাল’ এ রেডফোর্ডের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ হয় ফিদেল কাস্ত্রোর। ৭৭ বছর বয়সী কাস্ত্রোর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে রেডফোর্ড বলেন, ‘তিনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তাঁকে বেশ স্বাস্থ্যবান, রসিক আর উজ্জীবিত মনে হয়েছিল।’ এরপর ১৯৯৮ সালে শেষবারের মতো রেডফোর্ডের সাথে দেখা হয় ক্যাস্ত্রোর। শোনা যায়, সেইবার নাকি কিংবদন্তি এই কিউবান লিডারের সাথে স্কুবা ডাইভিংয়েও যান, আর এ কারণে নাকি তাঁকে আমেরিকান কর্তৃপক্ষের প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয়।