ডায়াবেটিসের লক্ষণ কী
শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের অভাব ঘটলে, ইনসুলিনের কাজের ক্ষমতা কমে গেলে অথবা উভয়ের মিলিত প্রভাবে রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। আধুনিক শহুরে জীবনে ডায়াবেটিস একটি সর্বজনীন সমস্যা। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ডায়াবেটিস কেয়ার জানিয়েছে ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ। আসুন জেনে নিই লক্ষণগুলো।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং পিপাসা লাগা
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে সেটি বের করে দিতে চায়। এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এ সময় পানির তেষ্টাও বেড়ে যায়। ঘন ঘন প্রস্রাবের ফলে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে, তাই পিপাসাও বেড়ে যায়।
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
শরীরে যখন ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর শর্করা ধরে রাখতে পারে না। শরীরে শর্করা প্রয়োজন হয় শক্তি জোগাতে। যখন শর্করার অভাব হবে তখন শরীরের শক্তি হ্রাস পায়। ফলে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে।
ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত ভাব
ক্ষুধার চাহিদা বাড়ার ফলে শরীর দুর্বল, ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু এ সময় শরীর শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না, তাই এই সমস্যাগুলো হয়।
মাত্রাতিরিক্ত ওজন হ্রাস
ডায়াবেটিসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ওজন হ্রাস। এ সময় রক্তে শর্করার আধিক্য ওজন কমার একটি অন্যতম কারণ। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ২০ পাউন্ড ওজন কমে যায়। তাই শরীরে ওজন মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অসাড়তা
রক্তে অতিরিক্ত শর্করার ফলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে তাই ব্যক্তি অসাড় অনুভব করতে পারে। শুধু তাই নয়, স্নায়ু দুর্বল হলে রক্তচাপ কমে যায়। ফলে মাথা ঘোরাতে পারে, দুর্বল লাগতে পারে।
দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া
রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে চোখে এর প্রভাব পড়তে পারে। যদি চোখের মণি স্ফীত হয় এবং আকারের পরিবর্তন হয় তবে হঠাৎ করে চোখে ঝাঁপসা দেখার সমস্যা হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
ডায়াবেটিসের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এই ঘটনা ঘটে। ফলে সহজে কোনো রোগ নিরাময় হতে চায় না।
ঘন ঘন ইনফেকশন
রক্তে শর্করার অসামঞ্জস্যতার ফলে ঘন ঘন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
আমাদের শরীর ৫০ থেকে ৭৮ ভাগ পানি থাকে। ঘন ঘন প্রস্রাব ও ঘাম হওয়ার ফলে শরীর শুষ্ক হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর। তাই এ সময় চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে এবং চুলকানি ভাব হতে পারে।
বিরক্তি
দেহে শক্তি কমে যাওয়া এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির ফলে সব সময় খারাপ লাগা এবং বিরক্তিবোধ হতে পারে। যেহেতু শরীর শক্তি পায় না এবং কর্মক্ষম থাকে না তাই এটা আপনার মেজাজকে খিটখিটে করতে পারে।
এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি লক্ষণ আপনার শরীরে প্রকাশ পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে জেনে নিন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কি না।