ঘুমেরও পর্যায় রয়েছে
শরীর, মনকে ভালো রাখার জন্য ভালো একটি ঘুম খুবই প্রয়োজন। ঘুমের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৭০তম পর্বে কথা বলেছেন
কে এম খলিলুর রহমান। বর্তমানে তিনি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে স্লিপ অ্যানালাইজার হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ঘুম আসলে কী? ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কী? কী কী ধরনের সমস্যা ঘুমের মধ্যে হতে পারে?
উত্তর : আমরা সব সময় ব্যস্ত থাকি। এই ব্যস্ততাকে নীরবতায় পরিণত করে আগামী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার একটি মাধ্যম ঘুম। আমরা চার রকমভাবে ঘুমাই। ঘুমের স্টেজ বা পর্যায়গুলো হলো, স্টেজ ওয়ান, টু, থ্রি ও র্যাম। এই চার রকমভাবে ঘুমাই। যে চার রকম না ঘুমাতে পারে তার কিন্তু সমস্যা হয়।
এই চার রকম যে ঘুম, এটি জনগণ কীভাবে বুঝবে? পর্যায় এককে সাধারণভাবে বুঝাতে হবে, আপনার ঘুমানোর পরে, একটু জোরে শব্দ হলেই আপনার ঘুমটা ভেঙে যায়। এই যে শব্দ হলে ঘুমটা ভেঙে যায় এটি হলো পর্যায় এক। আর স্টেজ টু, দুই নম্বর ঘুমকে গভীর ঘুম ধরা হয়। সাধারণত দুই/ তিন ডাক না দিলে ঘুম ভাঙবে না। এটা গভীর ঘুম। থ্রি হলো খুব গভীর ঘুম। স্বামী-স্ত্রী যদি খাটের ওপরে শুয়ে থাকে বাচ্চাসহ,অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা রাতের বেলা খাট থেকে পড়ে যায় অথচ স্বামী স্ত্রী বুঝতে পারছে না। সে পর্যায় থ্রিতে রয়েছেন। এই যে ঘুমটা এই ঘুমটা প্রত্যেকেরই দরকার। আরেকটি হলো র্যাম স্লিপ। র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ। এই ঘুমে যখন আমরা ঘুমাই তখন সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখি। যেই স্বপ্নগুলো আমরা মনে রাখতে পারি। এই স্বপ্ন দেখে কোনোদিন আমাদের সকালটা খুব ভালোভাবে শুরু হয়। আর স্বপ্ন যদি একটু খারাপ দেখি, তাহলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
গভীর ঘুম হবে, আপনি যদি চার ঘণ্টা ঘুমান, এর মধ্যে দুই ঘণ্টা। ২০ ভাগ হবে স্টেজ থ্রি ঘুম। আর র্যাম স্লিপ হবে ১৫ ভাগ। অনেকে বলে,আমি একবার ডাকলেই ঘুম থেকে উঠে যাই। এভাবে হবে না। ঘুমের ডোজটা পূর্ণ হতে হবে। আপনি যদি আট ঘণ্টা ঘুমান, চার ঘণ্টা স্টেজ টুতেই থাকবে। ঘুম থেকে উঠার পর অনেক কর্মক্ষম, অনেক ফ্রেশ অনুভব করবেন। সারাদিনে আপনার কোনো ধরনের খারাপ লাগবে না। আর সমস্যার কারণেই কিন্তু পর্যায়গুলো পরিবর্তন হয়।
প্রশ্ন : আদর্শ ঘুমে এই চারটি পর্যায় কতখানি থাকা উচিত?
উত্তর : শূন্য থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ১২ ঘণ্টা এদের ঘুমাতে হবে। এরপর ১৫ বছর থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ঘুমালে অনেক সতেজ অনুভব করবে। পঞ্চাশের পর চার থেকে ছয় ঘণ্টা ঘুমালে তারা অনেক সতেজ অনুভব করবে। এই গেল একজনের চাহিদা।
১৫ থেক ৫০ বছরের ব্যক্তিদের ঘুমটা আট ঘণ্টা ধরেন। আট ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা দুই নম্বর ঘুমে ঘুমাবে। এক ডাক দিলে ঘুম ভেঙে যায়, এটি নিয়ে গর্ব করার নেই। তাহলে তার ঘুমে সমস্যা রয়েছে। এটা হতে হবে অন্তত যেন দুই তিন ডাক দিলে ঘুম ভাঙে। এই ঘুমটা ঘুমাবে। আর র্যাম স্লিপটা পুরো ঘুমটাকে বেঁধে ফেলে। র্যাম স্লিপ হবে পরিসমাপ্তি।
ঘুমের সমস্যা অনেক রকম হতে পারে। ঘুমকে আমি দুই ভাগে ভাগ করি। আমরা যখন শ্বাস নেই, সেটি যদি সমান্তরালভাবে যায়, সেটি ঠিক আছে। যখন শ্বাসে সমস্যা হবে, ঘুমের ভেতর আপনি শ্বাস যদি কম নেন তাহলে এই করাতের অর্ধেক হয়ে যাবে। বাধা এলে ঘুমের সার্কেলের পরিবর্তন হয়ে যাবে। ঘুম থেকে উঠার পর বলবে আজকে ঘুমটা বেশি ভালো হয়নি বা গভীর ঘুম হয়নি। নিজের শরীরের বড় ডাক্তার হলো সে নিজেই। ঘুম থেকে উঠার পরই সে বলতে পারে, আজকে ভালো ঘুম হয়েছে বা হয়নি।