গভীর শ্বাস সুস্বাস্থ্যের জন্য
সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হলো ‘শ্বাসক্রিয়া’। একে আমরা প্রায়ই নজরে আনি না। মানুষের নিশ্বাস-প্রশ্বাস চলছে অবিরাম, মিনিটে ১৫-২০ বার, পুরো দিন, প্রতিদিন, যত দিন বেঁচে থাকি।
দৈনন্দিন যা হয়, আমরা প্রত্যেকে শ্বাসকার্য চালাই অগভীরভাবে। এতে আমাদের ফুসফুসের ক্ষমতার সামান্য শতাংশ কেবল ব্যবহৃত হয়। আমাদের শরীরের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, এর অংশবিশেষ মাত্র গ্রহণ করি এভাবে। পূর্ণ শ্বাস যেন নেওয়া হলো। আমরা জানি শ্বাসক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়। তবে এর মানে এই নয়, এর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। একটি ব্যস্ত, ব্যতিব্যস্ত জীবনে, চাপের কারণে অগভীর শ্বাসক্রিয়া চলে সারা দিন। দিনে অন্তত পাঁচবার গভীর শ্বাসক্রিয়ার জন্য ব্যয় করুন।
শ্বাসক্রিয়া চলবে অক্সিজেনের জন্য
মূলকথা হলো, আমাদের শ্বাস নিতে হবে বেশি বেশি অক্সিজেন গ্রহণের জন্য। মনে রাখা ভালো, প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা করছি একটি স্বাস্থ্যকর্ম। কেবল স্বাস্থ্যমূল্য বিচার করেই নয়, শ্বাস গ্রহণ-বর্জন কাজটি যেন মনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো ব্যাপার, ভিন্নভাবে চিন্তা করার জন্য মনকে তৈরি করা, এরপর সেই প্রশিক্ষণকে কাজে রূপান্তরিত করা। এরপর একটি উদ্দেশ্যমূলক, উত্তমমাত্রায় শ্বাসক্রিয়া যেন হয় দৈনন্দিন অভ্যাস।
কেন প্রয়োজন প্রতিদিন গভীর শ্বাসক্রিয়া
দেহের প্রতিটি কোষের জন্য চাই অক্সিজেন। আমাদের রয়েছে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালি। প্রতিটি কোষে অক্সিজেনকে সরবরাহ করা ও রক্তের অক্সিজেনকে ভারমুক্ত করার। কাজে এদের চাই প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। বহমান রক্তের এই অক্সিজেন একটি ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করে সব রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ায়। অক্সিজেন তো তাই জীবন। শরীরের অন্যান্য যন্ত্র সব অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। টাটকা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, সুনিদ্রা ও বিশ্রাম, প্রতিদিন শরীর চর্চা—এসবই স্বাস্থ্যের ওপর হিতকর প্রভাব ফেলে তখনই, যখন আমাদের শ্বাসক্রিয়া চলে অবিরাম। শ্বাস তো জীবনের ভিত্তি।
দেহের সুরক্ষা
প্রতিদিন তাই পাঁচ মিনিচ সময় রাখুন গভীর শ্বাসক্রিয়ার জন্য। সহজভাবে বলা যায়, চাপের বিরুদ্ধে এটি হলো দেহের শ্রেষ্ঠ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। প্রবল চাপের মধ্যে থাকলেও গভীর শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। শরীর তখন ভ্রম হলেও বুঝে নেয় চাপ চলে গেছে শরীর থেকে।
কী করে শ্বাস নেবেন বেশি বেশি, প্রতিদিন
দিনের কয়েক মিনিট গভীর শ্বাসক্রিয়া অভ্যাস করুন। দ্বিতীয়, যখনই চাপবোধ করবেন শরীর-মনে, সহজ ও গভীর শ্বাস নিন কয়েকবার। শরীর তখন তাই চায়। শ্বাস নিন নাসা পথে। এরপর বের করে দিন মুখ দিয়ে। পর পর পাঁচ-দশ দিন এমন করুন।
শরীরকে আরো সক্রিয়ভাবে শ্বাসকার্যের সঙ্গে যুক্ত করা যায় :
দিনের পাঁচ মিনিট গভীর শ্বাস ক্রিয়ার জন্য ব্যয় করুন। এমনকি কাজের মাঝে, চাপের মধ্যেও গভীর শ্বাসক্রিয়ার চর্চা ভালো। প্রয়োজনে নীরব শান্ত কোনো জায়গায় গিয়ে, চোখ বুজে শ্বাসক্রিয়া করা তো যায়। আবার কম্পিউটার কাজও করেছেন, গভীর শ্বাসক্রিয়াও চালাচ্ছেন, যেভাবে হোক সুফল পাওয়া যাবে। গভীর শ্বাসক্রিয়া এভাবে হয়ে যাবে জীবনের অংশ।
লেখক : অধ্যাপক ও ডিরেক্টর ল্যাব সার্ভিস, বারডেম।