গাড়িচালকের শরীর ও মনের ফিটনেস আছে তো?
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/11/07/photo-1541566147.jpg)
দেশে একজন গাড়িচালককে দৈনিক ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা গাড়ি চালাতে হয়। অনেক সময় এর চেয়ে বেশিও। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
এত সময় ধরে গাড়ি চালালে শরীর ঠিকমতো কাজ করে না। পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য এ দুটি কারণ যথেষ্ট। তবে গাড়িচালকদের অনেক অসুখই থাকতে পারে। মনের অবস্থাও খারাপ থাকতে পারে।
গাড়ির ‘ফিটনেস’ ঠিক রাখার জন্য নজরদারির ব্যবস্থা থাকলেও গাড়িচালকের মানসিক ও শারীরিক ‘ফিটনেসে’র বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যায়।
গাড়িচালকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে খেয়াল রাখা কেন জরুরি, এ ক্ষেত্রে করণীয় কী—এসব প্রসঙ্গে কথা হয় কমিউনিটি কেয়ার সার্ভিসের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাবেক লেকচারার ডা. মনিলাল আইচ লিটুর সঙ্গে।
ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘গাড়ি চালানোর সময় যেন দুর্ঘটনা পোহাতে না হয় বা দুর্ঘটনার ঘটনা কম ঘটে, সে জন্য গাড়িচালকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। সারা বিশ্বে গাড়িচালকদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা পরীক্ষা করা হয়। আমাদের দেশেও হয়, তবে আরো সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি দেখা প্রয়োজন।’
ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত গাড়িচালকরা ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করেন। অনেক সময় অনেককে ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টাও গাড়ি চালাতে হয়। আসলে গাড়ি চালানো খুব চাপযুক্ত কাজ। কারণ, এখানে গাড়িচালকদের সারা শরীর সংযুক্ত করে কাজটি করতে হয় এবং খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলেই দুর্ঘটনা হতে পারে। আমরা সাধারণত গাড়িচালকদের শরীর ও মনের দিকে খেয়াল করি না। তবে মালিকদের এটা ভাবা উচিত যে আমার গাড়িচালকটি দুর্ঘটনায় পড়লে আমিও এর ভুক্তভোগী হব।’
যেসব রোগে গাড়ি চালানো ঠিক নয়
কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলো থাকলে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। এসব রোগের প্রসঙ্গে ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ‘অ্যাপিলেপসি, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, অ্যাজমা, ব্ল্যাকআউট, স্পাইন সার্জারি, হেড ইনজুরি বা মেরুদণ্ডের আঘাত, পেসমেকার লাগানো, ভারটিগো বা মাথা ঘোরানোর রোগ, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, মোটর নিউরন ডিজিস, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, কোনো মানসিক রোগ, মদ্যপানে আসক্তি, পারকিনসনস ডিজিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকা, একচোখে না দেখা, শ্রবণশক্তি ও চোখে দেখার মারাত্মক সমস্যা, রিউমেটিক ফিভাব, হার্ট ডিজিস, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে গাড়ি না চালানো ভালো।’
গাড়িচালকদের প্রযুক্তিগতভাবে সচেতন থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালানোর আগে একজন চালককে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। হয়তো কিছুক্ষণ আগে মাদক নিয়ে এলো বা কারো সঙ্গে ঝগড়া করে এলো, সে কিন্তু সেই সময় শারীরিক বা মানসিকভাবে ফিট নয়। এই সময় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বাড়ে।’
গাড়িচালকদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা
টানা কাজ করতে হয় বলে গাড়িচালকদের স্বাস্থ্যে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে—এ কথা জানিয়ে ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ‘গাড়িচালকদের কোমরব্যথা, ওজনাধিক্য, ফুসফুসে সমস্যা ইত্যাদি হয়। এ ছাড়া টানা কাজ করার কারণে তাঁরা ঠিকমতো ও সময়মতো খাওয়াদাওয়া করতে পারেন না। আর এর বাজে প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর।’
করণীয়
গাড়িচালকদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় করণীয় বিষয়ে তার পরামর্শ :
১. আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। গাড়িচালকদের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক সুস্থতায় কাজ করা জরুরি।
২. গাড়ি চালানোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে দেখতে হবে। তাদের উপযুক্ত ও পারিশ্রমিক দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে হবে; খাবার, পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩. একজন গাড়িচালককে অবশ্যই প্রযুক্তির বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
৪. প্রতিষ্ঠানের মালিকদের গাড়িচালকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।
৫. স্বাস্থ্যকর খাবার, সুষ্ঠু বাসের পরিবেশ, বিশ্রামের সময় এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
৬. কাজের রুটিনে ভারসাম্য আনতে হবে।
৭. সাধারণত সাড়ে চার ঘণ্টা চালানোর পর আধা ঘণ্টা বিরতি নিতে হবে। এ সময় পানি পান করবে এবং ক্যালরি রয়েছে এমন খাবার খাবে। বিরতি নেওয়ার সময় হালকা ব্যায়াম করা উচিত, খাবার খাওয়া উচিত, বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এরপর তিন ঘণ্টা চালাবে। এর পর আবার বিশ্রাম নেবে এবং ভালো খাবার খাবে। সাধারণত আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করাই ভালো।