আশরাফুলকে মনে পড়ছে
বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক আক্ষেপের নাম মোহাম্মদ আশরাফুল। ফুল হয়ে ফুটতে না ফুটতেই ঝরে গেছেন অমিত সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটার। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট এলেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে আশরাফুলের কথা। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আশরাফুলের ব্যাটিং প্রদর্শনীর কথা কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ক্রিকেটের দুটি ফরম্যাটে বাংলাদেশের অবস্থা তখন একেবারে নাজুক। কালেভদ্রে দুই-এক ম্যাচে ভালো খেলে বাংলাদেশ, তাও আবার আশরাফুলের ব্যাট হাসলেই হেসে ওঠে বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেটের অন্য নাম তখন আশরাফুল।
২০০০ সালে সফরের পর আবার বাংলাদেশে আসে ভারতীয় জাতীয় দল। প্রথম টেস্টে শচীন টেন্ডুলকার ও ইরফান পাঠানের সামনে নাকানি-চুবানি খায় বাংলাদেশ। শচীন ২৪৮ রান আর বল হাতে ম্যাচে ১১ উইকেট নেন ইরফান পাঠান। দলের বিপর্যয়ের মুখে ব্যতিক্রম ছিলেন আশরাফুল। প্রথম ইনিংসে জহির-পাঠান-কুম্বলেদের বোলিং আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে ১৩৫ বলে ৬০ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। লোয়ার অর্ডারে মোহাম্মদ রফিক (৪৭) প্রতিরোধ গড়লে ১৮৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসটা আসে সেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। সেটার রূপকারও সেই আশরাফুল।
দ্রাবিড় (১৬০), গম্ভীর (১৩৭) ও সৌরভ গাঙ্গুলীর (৮৮) রানে ভর করে ৫৪০ রান করে ভারত। অনিল কুম্বলের দাপটে ৫৪ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ইনিংসের হাল ধরেন আশরাফুল। উইকেটে এসেই পাল্টা আক্রমণ চালান তিনি। জহির-পাঠান-কুম্বলেদের বোলিং ধারকে অকার্যকর করে দিয়ে একের পর এক চার-ছয় মারতে থাকেন আশরাফুল। অন্যপ্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসা শুরু হলেও আশরাফুল খেলেছেন নিজের মতোই। লংঅনের ওপর দিয়ে হরভজন সিংকে মারা আশরাফুলের ছয় দুটি আজও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা স্থিরচিত্র। শেষ পর্যন্ত ১৯৪ বলে ২৪টি চার তিন ছয়ে ১৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন আশরাফুল। এই ইনিংসের কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কারও পান তিনি।
২০০৭ সালে মিরপুরে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলেন আশরাফুল। সেবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ওয়াসিম জাফর, দীনেশ কার্তিক, রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের শতকে ৬১০ রান করে ভারত। প্রথম ইনিংসে ১১৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। ১০ রানে তিন উইকেটে হারানো দলের হাল ধরেন আশরাফুল। ৪১ বলে ১২ চার দুটি ছয়ে ৬৭ রান করেন তিনি। কুম্বলের মতো তারকাকে পাড়ার বোলারের পর্যায়ে নামিয়ে আনেন তিনি। এই লেগস্পিনারের বলে ১৯ বলে ৩৩ রান করেন আশরাফুল। ভারতের বিপক্ষে খেলা আট টেস্টের ছয়টিতেই খেলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। আর তাতে শতক ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮৬ রান করেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৬ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলব বাংলাদেশ। স্বপ্ন পূরণের এই ম্যাচে আশরাফুলকে ভীষণ মিস করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা।