তবে কি আবারও টিকে গেলেন কাবরেরা?

হামজা চৌধুরী-শমিত সোমদের আগমণে দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ার বইতে শুরু করেছে। মাঠের ফুটবলেও বাংলাদেশ এখন বেশ শক্তিশালী দল। ফলাফল দেখলে অবশ্য সেটি মনে করার কোনো কারণ থাকবে না। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভালো করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তবে সেই আশা এখন হতাশায় রূপান্তরিত হয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে এসেছে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার নাম।
গত জুনে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরে বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেলেও ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এর আগে ভারতের বিপক্ষেও জয়ের সম্ভাবনা দেখানো ম্যাচে ড্র করেছে। সর্বশেষ হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হার আর দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করেছে বাংলাদেশ।
সবগুলো ম্যাচের শেষে দিনের আলোর মতো ফুটে উঠেছে কাবরেরার ভুল-ভাল পরিকল্পনা। সমর্থক, সাবেক ফুটবলার, দেশের ক্লাব ফুটবলের কোচরাও ধরিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ এই কোচের ভুল। সমালোচনা করেছেন তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে। তবু, তার যেন নেই কোনো ভাবলেশ। তিনি যেন অপেক্ষায় থাকেন, কখন একটি ম্যাচ শেষ হবে আর তিনি বাড়ি ফিরবেন। যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর কাবরেরা পাড়ি জমান স্পেনে। আসেন পরের ম্যাচের আগে। ঘরোয়া লিগের ম্যাচ দেখতে, বয়সভিত্তিক দলে নজর রাখতে তার যেন বয়েই গেছে।
গত ৩ থেকে ৪টি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে কাবরেরার স্কোয়াড আর একাদশ বাছাইয়ের ভুল। ভারতের বিপক্ষে স্কোয়াডে তিনি ব্যাকআপ কোনো সেন্টারব্যাক রাখেননি। যে কারণে ম্যাচের শুরুতেই তপু বর্মণ চোটে পড়লে একজন ফুলব্যাককে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলিয়ে দেন তিনি। একই ধারা বজায় রেখেছেন শেষ কয়েকটি ম্যাচেই।
শুরুর একাদশ সাজানো কিংবা বদলি খেলোয়াড় নামানোতেও কাবরেরার একগুয়েমি চোখে পড়ার মতো। ভ্রমণ ক্লান্তির দোহাই দিয়ে ঘরের মাঠে হংকংয়ের বিপক্ষে শুরুর একাদশে রাখা হয়নি শমিত সোমকে। আর বয়সের অজুহাতে ছিলেন না ডিফেন্ডার জায়ান আহমেদ। ছিলেন না ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল ইসলাম।
অথচ ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে ড্রয়ের আশা দেখিয়েছিলেন এই তিনজন। বদলি হিসেবে তারা মাঠে নামার পরই খেলায় গতি পায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে, জামাল ভূঁইয়া তো এখন কাবরেরার বাতিলের খাতায়ই পড়ে গেছেন। কিন্তু হামজা-জামালের ডুয়ো কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটি দেখা গিয়েছিল নেপালের বিপক্ষে।
অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও বিখ্যাত এই স্প্যানিশ। ফুটবলারদের সহজাত পজিশন বাদ দিয়ে বড় ম্যাচে নামিয়ে দেন অন্য পজিশনে। যেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতেই ম্যাচের সর্বনাশ ঘটে যায়। ভারত ম্যাচে যেমন রাকিব হোসেনকে তার পজিশন থেকে সরিয়ে নিচে খেলানো হয়েছে। অথচ তিনি ফরোয়ার্ড। কাজেম শাহকে তার জায়গা থেকে বের করে ওপরে তোলা হয়েছে। কাজেম মাঝমাঠের বাইরে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন।
কাববেরার এমন একগুয়েমি থেকে দেশের ফুটবলকে বাঁচাতে প্রায় সবগুলো সমর্থক গোষ্ঠিই সরব কাবরেরার পদত্যাগ দাবিতে। প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে সেই দাবি জানিয়েছিলেন এক বাফুফে কর্তাও। তবুও দিব্যি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন কাবরেরা।
পারফরম্যান্সে যে কাবরেরা খুশি করতে পারছেন, তেমনটিও না। প্রায় বছর তিনেক হলো বাংলাদেশের ডাগআউটে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তার অধীনে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট ৩৫টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে হেরেছে ১৭টি ম্যাচে। জয় আর ড্র সমান ৯টি করে ম্যাচে। এই সময়ে বাংলাদেশ গোল হজম করেছে ৫২টি। আর প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেয়েছে ২৭ বার।
গত আগস্টে পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন কাবরেরা নিজেও। পারফরম্যান্সে শূন্য হলেও কথায় পারদর্শী এই স্প্যানিশ কোচ। সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বাফুফে সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছি। তারা তাদের মতামত দিয়েছেন, আমি আমারটা দিয়েছি। কেউ একমত হয়েছেন, কেউ ভিন্নমত দিয়েছেন, এটাই স্বাভাবিক।’
কাবরেরাকে জাতীয় দল থেকে সরানো নিয়ে সিঙ্গাপুর ম্যাচের সময় বাফুফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সামনে হংকং ম্যাচের আগে হাতে সময় খুব কম। যেকারণে এখনই তাকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বাফুফে। হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পরে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানিয়েছিলেন, হংকং ম্যাচের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কাবরেরার বিষয়ে।
হংকংয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচই শেষ হয়েছে। প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি বাংলাদেশ। ফলে শেষ হয়েছে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার স্বপ্ন। বাছাইয়ে সামনের দুটি ম্যাচ কেবলই বাংলাদেশের জন্য নিয়মরক্ষার। চাইলেই বাফুফে এই সময়ে কাবরেরাকে সরিয়ে নতুন কাউকে খুঁজতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আভাস নেই। যে কারণে প্রশ্ন উঠছে, তবে কী আবারও টিকে গেলেন কাবরেরা?