ডিজিটাল মেলায় দেশীয় প্রযুক্তির ড্রোন
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫ মেলা প্রাঙ্গণ। আকাশে উড়ছে চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন। আগত দর্শনার্থীদের চোখে বিস্ময়। আজ মঙ্গবার সকালসাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের চত্বরে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন দেখান একদল নবীন বিজ্ঞানী।
সকালে মেলার বাইরে ও মেলার স্টলে মোট চারটি ড্রোন দেখা যায়। সবগুলোই কপ্টার ড্রোন অর্থাৎ হেলিকপ্টারের মতো পাখার ঘূর্ণনে ওড়ে। তিনটি কোয়াড কপ্টার ড্রোন অর্থাৎ চারটি করে পাখা। অপরটি হলো তিন পাখার ট্রাইকপ্টার ড্রোন।
সম্মেলন কেন্দ্রেরচত্বরে নিজেদের তৈরি দুটি ড্রোন প্রদর্শন করেন নাহিদ ফেরদৌস, অন্তর সঞ্জীব দাস ও সজীব গাঙ্গুলি। তিনজনই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। নিজেদের দুটি কপ্টার ড্রোনের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা আর কাজ তাঁরা দর্শকদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁদের প্রথম ড্রোনটি আকৃতিতে কিছুটা বড়। তবে দ্বিতীয় ড্রোনটি আকৃতিতে কিছুটা ছোট হলেও এতে প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটেছে বেশি।
নাহিদ ফেরদৌস বলেন, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম জিপিএস প্রযুক্তি যুক্ত দ্বিতীয় ড্রোনটিতে যুক্ত আছে পাঁচ মেগাপিক্সেলের পাইলট ক্যামেরা। এটি রেডিও সিগনালের মাধ্যমে ৯০০ মিটার দূর থেকেও ঝকঝকে পরিষ্কার ছবি ও ভিডিওচিত্র পাঠাতে পারে। ইন্টারনেটে যুক্ত করা হলে এটি বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকেই ছবি পাঠাতে পারবে। অ্যাক্সিলোমোটর ও জাইরোর কারণে ড্রোন দুটির কত গতি ও কীভাবে এগোচ্ছে বোঝা যায়।
নাহিদ ফেরদৌস আরো বলেন, লিথিয়াম সেল ব্যাটারিতে (তড়িৎকোষ) কোয়াড কপ্টার ড্রোন দুটি একবার পূর্ণ চার্জে ২০ মিনিট চলতে পারে। তবে আরো উন্নত ব্যাটারি যুক্ত করা হলে ড্রোনদুটি টানা কয়েকঘণ্টাও চলতে পারবে। ড্রোনগুলোর প্রতিটি পাখা মিনিটে এক ভোল্টে এক হাজার ২০০ বার ঘোরে। আকৃতিতে বড় প্রথম ড্রোনটি নিজের ওজনসহ পাঁচ কেজি পর্যন্ত বহন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় ড্রোনটি দেড় কিলোমিটার দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আরো উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা গেলে তা বাড়িয়ে নয় থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব।
ড্রোন দুটির উদ্ভাবকরা জানিয়েছে, এগুলো সরাসরি ভিডিওচিত্র পাঠানো, ছবি তোলা, চিকিৎসাসেবা পাঠানো, নিরাপত্তাব্যবস্থা থেকে শুরু করে জরিপের কাজেও ব্যবহার করা সম্ভব।
আজ সকালে মেলার মধ্যে আরো দুটি ড্রোন দেখা দেখা গেছে। যার একটি হলোট্রাই কপ্টার ড্রোন। এটি তৈরি করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চার শিক্ষার্থী মিরাজুল হোসেন, কাজী গোলাম মাহমুদ, আবু আর রাব্বি, সারেন বিন নাসৌরি। তাঁদের তত্ত্বাবধানের ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক জিএমএ এহসানুর রহমান।
দলটির অন্যতম সদস্য মিরাজুল হোসেন বলেন, ড্রোনটি নিজের ওজনসহ দুই কেজি বহন করতে পারে। অ্যারিয়েল ক্যামেরা সংযুক্ত করা হলে এটি সরাসরি ভিডিওচিত্র ও ছবি পাঠাতে পারে। বর্তমানে ড্রোনটি আধা কিলোমিটার দূরথেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে যুক্ত আছেজিপিএস প্রযুক্তি। তাই কোনো লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান বলে দেওয়া হলে ড্রোনটি নিজে থেকেই সেখানে পৌঁছাতে পারে। একবার পূর্ণচার্জে ট্রাইকপ্টার ড্রোনটি টানা ২০ মিনিট উড়তে পারে। তবে উন্নত ব্যাটারি ব্যবহার করে এর ওড়ার সময় ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
অপর ড্রোনটি এনেছে সাইন প্লাস নামে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তাঁদের কোয়াড কপ্টার ড্রোনটির নাম দেওয়া হয়েছে সাইনপ্লাস সিভিল ড্রোন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড্রোনটিতে সংযুক্ত অত্যাধুনিক ছবি তোলার প্রযুক্তি। তাই ভূমি জরিপের জন্য ছবি তোলার কাজে এটি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জরুরি চিকিৎসাসেবা পাঠানো ও নিরাপত্তার কাজে এটি ব্যবহার করা যায়।