চিকিৎসা যন্ত্রপাতির রপ্তানিকারক হতে চায় ভারত

চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত ৯৫ শতাংশের বেশি যন্ত্রপাতি আমদানি করে ভারত। এই অবস্থার পরিবর্তন করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে দেশটি। এই লক্ষ্যে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে ভারতের প্রথম মেডিকেল ডিভাইস পার্ক ‘অন্ধ্র প্রদেশ মেডটেক জোন' বা এএমটিজি।
অন্ধ্র প্রদেশের বন্দর শহর বিশাখাপত্তনমে স্থাপিত এএমটিজির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জিতেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘আপনি যদি ভারতের কোনো হাসপাতালে যান তাহলে দেখতে পাবেন, ১০০টির মধ্যে ৯৫টিরও বেশি ওষুধ ভারতে তৈরি। কখনও কখনও সেটা শতভাগও হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি করা হয়।’’
ভারতের চিকিৎসা ডিভাইস বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা ২০২২ সালে ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া চিকিৎসা ডিভাইসের জন্য আমদানির উপর ভারতের নির্ভরতা প্রায় ৩৫ শতাংশ কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
যন্ত্রপাতি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ‘ট্যুভ রাইনলান্ট' এএমটিজির যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে থাকে। ‘‘যেমন মাইক্রো-সিটিতে এক্সরে ব্যবহার করা হয়। তাই যন্ত্র থেকে এক্স-রে বিকিরণ বের হচ্ছে কিনা তা আমাদের পরীক্ষা করতে হয়। আমরা ডিভাইসটি তৈরি করেছি। কিন্তু এক্স-রে আমাদের পরিবেশ, শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা সাবধানে এই ধরণের জিনিস পরীক্ষা করি এবং তারপর সার্টিফিকেট দেই,’ বলে জানান ট্যুভ রাইনলান্টের টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার মানস রঞ্জন দাস।
যখন একটি ডিভাইস প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তখন এটি আন্তর্জাতিক মানের বলে স্বীকৃতি পায়। যন্ত্রটি সার্টিফিকেশন পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও তার মান বাড়ানোর খরচ কম হয়, কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটি এএমটিজি পার্কের মধ্যেই করা হয়।
ট্যুভ রাইনলান্ট এর জেনারেল ম্যানেজার নগেন্দ্র হেব্বার বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের সাধারণ সুরক্ষা মান পরীক্ষা করতে হবে, এরপর যন্ত্র-নির্দিষ্ট মান সুরক্ষা পরীক্ষা, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক উপযোগিতা পরীক্ষা, অ্যাকুস্টিক পরীক্ষা এবং তারপর জৈব উপযোগিতা পরীক্ষা করতে হবে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে যন্ত্রটি ব্যবহারের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়।’’
এএমটিজি বলছে, ভারতে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এসব মেডিকেল যন্ত্র এবং পণ্য উৎপাদন করতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ খরচ কম হয়। ভবিষ্যতে ভারত চিকিৎসা প্রযুক্তির আমদানিকারক দেশ থেকে একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক হয়ে উঠতে চাইছে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি উৎপাদনে দ্রুত প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রধান নির্বাহী জিতেন্দ্র শর্মা মনে করছেন, মানবসম্পদের মান উন্নয়নের এখনও অনেক সুযোগ আছে।
জিতেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তত্ত্ব বেশি শেখানো হয়৷ খুব বেশি ব্যবহারিক বিষয় নেই, তাই লেখাপড়াটা আনন্দের হয় না৷ আমাদের, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া শেখানো হয়। তাই জার্মানির তুলনায় আমাদের বেশি ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও মানের দিক থেকে আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে আছি। কেন? কারণ, ব্যবহারিক পড়াশোনা নেই।’’
সমস্যা সমাধানের জন্য এএমটিজি চিকিৎসা প্রযুক্তির জন্য নিবেদিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানান শর্মা। এর আওতায় কারখানা প্রাঙ্গণ এবং গবেষণা বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।