দিল্লিতে মোদি-মমতা বৈঠক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় দিল্লিতে শুরু হয় এ বৈঠক। এর কিছু আগেই ৭ নম্বর লোক কল্যাণ মার্গ রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পৌঁছে যান মমতা। হলুদ গোলাপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কলকাতার সুস্বাদু মিষ্টিও তুলে দেওয়া হয় মোদির হাতে।
মোদি-মমতার এই একান্ত বৈঠক চলে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে। বৈঠক শেষে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ৭ নম্বর লোক কল্যাণ মার্গ ছেড়ে মমতা বেরিয়ে চলে যান ১৮৩ সাউথ এভিনিউয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ বাংলোতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেখানেও নতুন রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা হিসেবে হলুদ গোলাপ এবং মিষ্টি তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
মোদি-মমতার ৪৫ মিনিটের বৈঠকে কী আলোচনা হল, তা নিয়ে জল্পনা ছড়ায়। তবে, এই বৈঠক নিয়ে মমতা বা মোদি কোনো তরফেই কিছু জানানো না হলেও কেন্দ্রের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে বকেয়া পাওনা নিয়ে কথা হয় বলে আভাস মিলেছে। কেন্দ্রকে সেই বকেয়া দ্রুত মেটানোর দাবি জানান মমতা। এদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের বিস্তারিত বকেয়ার হিসাব তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর তরফে দেওয়া এক চিঠির বরাতে জানা যায়, বকেয়া বাবদ কেন্দ্রের কাছে এক লাখ ৯৬৮ কোটি রুপি পায় রাজ্য। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, সমগ্র শিক্ষা মিশন, ছিটমহল বিনিময়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, মিড ডে মিল, স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্প বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-যশ-আমফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা করোনা অতিমারির রোধে কেন্দ্রীয় তহবিলও এখনো পাওয়া যায়নি। মমতার বক্তব্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ না পাওয়ার কারণে একদিকে যেমন মন্ত্রণালয় চালাতে কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে ঠিক তেমনি রাজ্য মানুষের পরিষেবা প্রদানও কঠিন সমস্যায় পড়েছে।
একটি সূত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়েও কথা হয় উভয়ের মধ্যে। পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের নাম বদল নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে।
চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার দিল্লি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার সফরসঙ্গী হন তাঁর ভাতিজা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সফরে মোট তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মমতার। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন মমতা। সবকিছু ঠিক থাকলে মমতা মোদির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও আগামী রোববার (৭ আগস্ট) দিল্লিতে বসবে ‘নীতি আয়োগ’র বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে যোগ দেবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়া আগামীকাল শনিবার কয়েকজন অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা মমতার। দিল্লির সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে ওই বৈঠকে থাকার কথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওসহ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর। অবিজেপি শাসিত রাজ্যে ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সসহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর অতি সক্রিয়তা নিয়ে ওই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। দিল্লি সফর শেষ করে আগামী সোমবার ফের কলকাতায় ফিরে আসবেন মমতা।
বিরোধীরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ইডির সক্রিয় হওয়া, রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তার এই সব ইস্যুতেই গোপন বোঝাপড়ার জন্য দিল্লি গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার মন্ত্রিসভার এই সাবেক সদস্যের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং গ্রেপ্তারি ইস্যুতে দিল্লির রাজনীতিতেও সোরগোল পড়েছে। ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে তৃণমূল কংগ্রেস। আর ঠিক তখনই দিল্লি সফরে রয়েছেন মমতা। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, এখন চাপে পড়েই তিনি প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন।