পানির কন্টেইনারকে বিস্ফোরক ভেবে কাবুলে সেই ড্রোন হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল স্বীকার
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শেষ করার আগের দিন কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় বেসামরিক নির্দোষ ১০ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে জানা গেছে, কাবুলের ওই হামলায় জামাইরি আকমাধি নামের আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মী এবং তাঁর পরিবারের সাত শিশুসহ নয় জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে সুমাইয়া নামের দুই বছরের শিশুও রয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরে আইএসের ভয়াবহ হামলার দুদিন পর তিন কিলোমিটার দূরের একটি বাড়িতে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি রয়েছে এমন সন্দেহে ড্রোন হামলা চালায় বিমানবন্দরে অবস্থানকারী মার্কিন সেনারা। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, হামলার আগে আট ঘণ্টা ধরে মার্কিন গোয়েন্দারা ওই ব্যক্তির গাড়িটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। ধারণা করা হয়েছিল গাড়িটি স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস-কে অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট খোরাসানের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তির গাড়ি কাবুল বিমানবন্দরের নিকটতম একটি স্থাপনায় এসেছিল যেটি আইএস-কে’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মার্কিন গোয়েন্দাদের একটি ড্রোনের মাধ্যমে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি গাড়ির পেছনে বিস্ফোরকের কন্টেইনার ভরছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, সেগুলো পানির কন্টেইনার ছিল।
ড্রোন হামলায় দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটার বিষয়টিকে গাড়িটিতে বিস্ফোরক ছিল তার প্রমাণ হিসেবে বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন জানা গেছে, দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি আসলে গাড়ির সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ছিল।
জেনারেল ম্যাকেঞ্জি এই হামলাকে ‘মারাত্মক ভুল’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দারাই হামলাটি চালিয়েছিল যেখানে তালেবান কোনোভাবেই জড়িত ছিল না।
ড্রোন হামলার পরদিন নিহতের আত্মীয় স্বজনেরা বিবিসিকে জানায়, তারা দেশত্যাগের জন্য আবেদন করেছেন। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ফোন কলের অপেক্ষায় ছিলেন। নিহতদের মধ্যে আহমাদ নাসের নামের একজন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অনুবাদক ছিলেন।
কাবুলের এই ড্রোন হামলাই আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকের যুদ্ধের সর্বশেষ অভিযান। দীর্ঘ সময় ধরে আকাশপথের ওপর নির্ভরশীল এই যুদ্ধের মানবিক ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।