বন্যপ্রাণী বাঁচাতে হাত মেলাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ
বাঘ ও হাতি বাঁচাতে একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বন বিভাগ। দুই দেশে ছড়িয়ে থাকা সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অংশে বাঘের অবাধ বিচরণভূমি রক্ষায় যৌথভাবে হাত মেলাতে চলেছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আজ বুধবার থেকে ভারতের কলকাতায় শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক। এ বিষয়ে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রেস সচিব মোফাকখারুল ইকবাল জানান, কলকাতার সল্টলেক সংলগ্ন রাজারহাট-নিউটাউনে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে।
দুই বাংলার পক্ষ থেকে শুধু বাঘ বা হাতি বাঁচানো নয়, সুন্দরবনে বেড়ে চলা চোরাশিকারিদের দমন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর এলিফ্যান্ট করিডর উন্মুক্ত রাখা, লাল চন্দনকাঠ পাচার ঠেকানোসহ বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিনের এই আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মুহাম্মদ ইউনুস আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম ও মেঘালয়ের বন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাজ্যের মুখ্য বন কর্মকর্তা আজম জাইদি।
পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গত দুই বছরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার সীমান্তে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরমধ্যে সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় চোরাশিকারিদের উপদ্রব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে বাঘের এ দেশে প্রবেশ করা বা এ দেশের বাঘের ও দেশে চলে যাওয়া। একইসঙ্গে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে চন্দনকাঠ চোরাচালানের একটি বড় চক্র পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরা চন্দনকাঠকে চোরাপথে পশ্চিমবঙ্গে এনে তারপর তা জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার ও চিনে পাচার করে। এই বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয় নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হবে।
পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স এবং সুন্দরবনে চোরাশিকারিরা কোনো বন্যপ্রাণী শিকার করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে গিয়ে আত্মগোপন করে, একইভাবে বাংলাদেশ থেকে এসেও এই রাজ্যে আত্মগোপন করে তারা। ভারতের আরো দুই রাজ্য আসাম ও মিজোরামের বাংলাদেশ সীমান্তেও একই সমস্যা দেখা যায়। এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের বন দপ্তর নজরদারির ক্ষেত্রে আর কী কী বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তা নিয়েই দুইদিনের এই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ইউনুস আলী জানান, মূলত কীভাবে এই করিডরকে উন্মুক্ত রেখে কাজ করা যাবে- সেই বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা চলবে। পাশাপাশি, সুন্দরবনের বাঘ বাঁচানো, চোরাশিকারিদের উপদ্রব এবং যখন তখন চোরাশিকারিদের সীমান্ত পেরিয়ে দুই দেশে প্রবেশ প্রসঙ্গেও আলোচনা হবে। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের কীভাবে এই কাজে যুক্ত করে নজরদারি আরো বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে একটা রূপরেখা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বন্যপ্রাণীর সমস্যা নিয়ে দুইদিনের এই বৈঠকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। সেইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব সমাধানের উপায় বের করার চেষ্টা করা হবে।