গাজায় যুদ্ধ থামাতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে
গাজায় যুদ্ধ থামাতে ইসরায়েলের সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকার মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দেশটির সেনাবাহিনী চলতে থাকা সংঘাতে একদিনের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শোক প্রকাশের পাশাপাশি এই ঘটনার জবাব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইসরায়েলিরা। খবর এএফপির।
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ডেনিয়েল হাগারি জানান, সোমবার অভিযানে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি দল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আচমকা হামলার মুখে পড়ে। রকেট চালিত গ্রেনেড হামলায় ২৪ ইসরায়েলি সৈন্যের মধ্যে ২১ জনই মারা যায়। যোদ্ধাদের আক্রমণে ইসরায়েলি সেনাদের একটি ট্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের তদন্ত হবে। আর ইসরায়েলকে অবশ্যই ঘটনাগুলো থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে হবে।’
এদিকে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থলযুদ্ধ আরও জোরালো হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা বলেছে, তারা শহরটি ঘিরে ফেলেছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংক খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে বেশকিছু লোক আহত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এ ব্যাপারে কিছু জানে না।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা সংস্থাটির সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে। এতে সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু নিরীহ লোক আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন
জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েলের : রিপোর্ট
অন্যদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে আবারও বলেছে, ১৭ লাখ বাস্তুচ্যুত বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক রোগ ও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র আবির ইতেফা জানান, গাজা প্রতিদিন একটু একটু করে ভয়াবহ দুর্যোগের দিকে এগোচ্ছে। এই ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায় রয়েছে, যা এই মুহূর্তে বিশ্বের কোথাও নেই।
এর মাঝেও থেমে নেই ইসরায়েলি আগ্রাসন। গাজা যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে হুতিদের নিয়ন্ত্রিত স্থাপনায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা নিতে এই হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হুতিরা।
ইরাকে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে বেশ কিছু ড্রোন হামলা চালিয়েছে জিহাদিরা। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর ওপর ১৪০টি হামলা চালানো হলো।
এদিকে, ইসরায়েলের দ্বি-রাষ্ট্র ধারণার বিরোধিতা করা এবং তা প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েলের অবস্থান অগ্রহণযোগ্য। আর এটা শুধু যুদ্ধকে দীর্ঘায়িতই করবে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল অবশ্যই পুরো গাজার নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নেবে, এমনকি হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়া হলেও। এ ছাড়া পশ্চিম তীরের সার্বভৌমত্বের বিষয়টিকেও তিনি বাতিল করে দেন।
তবে ইসরায়েলের মিত্ররা এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। এমনটি হলে কেউ কেউ ইসরায়েলের ওপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে নেওয়ার কথাও জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও জানান, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবশ্যই অবসান হতে হবে।
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল
গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা ও বোমাবর্ষণে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজারে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই হলো নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু।