নির্বাচনি সমাবেশে বন্দুক হামলা, কানে গুলিবিদ্ধ ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি সমাবেশে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টায় হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দুকধারীর গুলি ট্রাম্পের কানে আঘাত করেছে। দেশটিতে ২০২৪ সালের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। খবর এএফপির।
হামলায় ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পের মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়। এরপর এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে দ্রুত নির্বাচনি সমাবেশের মঞ্চ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পেনসিলভানিয়ার বাটলার এলাকায় এই হামলার পাল্টা জবাবে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে হামলাকারী ও একজন পথচারী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও দুইজন সমর্থক।
নিরাপত্তাকর্মীরা যখন ট্রাম্পকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সমর্থকদের ভিড়ের দিকে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঠিয়ে তার দৃঢ়তার জানান দিচ্ছিলেন। পরে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার ডান কানের উপরের অংশে বুলেট আঘাত করেছে।’
এদিকে এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনাকে ‘অসুস্থ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’
নির্বাচনি সমাবেশে গুলির শব্দের পরপরই ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ লেখা টুপি পরা ট্রাম্প যন্ত্রণায় মুখবিকৃত করে তার কান চেপে ধরেন। এ সময় তার ডান কান ও গাল বেয়ে রক্ত পড়তে দেখা যায়। এর পরপরই দ্রুত সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ডায়াসের পাশে আধশোয়া করে রাখা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা দেয়াল তৈরি করে নির্বাচনি সমাবেশের মঞ্চের পাশে থাকা গাড়িতে তোলা হয়।
এই ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য যে আমাদের দেশে এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘শোঁ শোঁ শব্দের পর গুলির শব্দে আমি বুঝতে পারি ঘটনাটি স্বাভাবিক ছিল না, তাৎক্ষণিক আমি অনুভব করি আমার চামড়া চিড়ে বুলেট বেরিয়ে গেল। প্রচুর রক্ত ঝরছিল এবং আমি বুঝতে পারি কী ঘটেছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানায়, নির্বাচনি সমাবেশের বাইরে একটি উঁচু জায়গা থেকে সন্দেহভাজন হামলাকারী একাধিক গুলি ছোড়ে। এর পরপরই ওই হামলাকারীকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরাপদে আছেন এবং তার শুশ্রুষা চলছে। এই ঘটনায় একজন দর্শক নিহত এবং আরও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, হামলাকারীর পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সমাবেশে যে ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
গোটা বিশ্ব এই ঘটনায় এক ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বেশ বিচলিত। তিনি আশা করছেন, খুব দ্রুত তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
আগামী সপ্তাহে মিলওয়াওকিতে রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চূড়ান্ত নির্বাচনি সমাবেশের মঞ্চে বক্তব্য দিতে ওঠার পরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটলো।
গুলির শব্দের পরপরই চারদিকে আর্তনাদ আর চিৎকারে এক ভয়াল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় মাইক্রোফোনে শোনা যায় ট্রাম্প বলছেন, ‘আমাকে আমার জুতাটা নিতে দাও।’ এরপর তার জুতা নিরাপত্তাকর্মীরা তার পায়ে পড়িয়ে দেন।
এরপর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উপরে তুলে কিছু শব্দ উচ্চারণ করেন, যা তাৎক্ষণিক বোঝা যায়নি। নিজের প্রত্যয় প্রকাশ করতেই তিনি কিছু কথা বলেন। নিরাপত্তাকর্মীরা যখন তাকে মঞ্চ থেকে নিয়ে গাড়িতে তুলছিলেন তখনও তিনি তার মুঠোবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং রাজনৈতকি সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৬৩ সালে মোটর শোভাযাত্রায় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আততায়ীর হামলায় নিহত হন। ১৯৬৮ সালে তার ভাই ববি কেনেডিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান আততায়ীর হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান।