তেহরানে হানিয়াকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করল ইসরায়েল
জুলাইয়ে তেহরানে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার বিষয়টি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এবার ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।
হানিয়া ইরানের রাজধানীতে যে ভবনে অবস্থান করছিলেন, সেখানে এক হামলায় নিহত হন। এ হামলার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছিল।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের সঙ্গে সম্মত হওয়ার বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে কখন এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে, তার সময়সীমা উল্লেখ করেননি তিনি।
এ ছাড়া একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হামাস ও ইসরায়েলের আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু এখনও বাকি আছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ তার ভাষণে বলেন, ইসরায়েল হুতিদের ওপর ‘কঠিন আঘাত’ হানবে এবং তাদের নেতাদের ‘শিরচ্ছেদ’ করবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তেহরান, গাজা ও লেবাননে হানিয়া, (ইয়াহিয়া) সিনওয়ার ও (হাসান) নাসরুল্লাহর সঙ্গে যা করেছি, আমরা হোদেইদা ও সানায় তা-ই করব।’ সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও হামাসের এই নেতারা চলতি বছর নিহত হয়েছেন।
হানিয়া ব্যাপকভাবে হামাসের শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি নিহত হওয়ার পর হামাস শীর্ষ নেতা হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম ঘোষণা করেন, যিনি গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার অন্যতম প্রধান হোতা।
অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে সিনওয়ার নিহত হন। গোষ্ঠীটি এখনও তাদের নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেপ্টেম্বরে বৈরুতে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক জাহাজে হামলা শুরু করে। গাজার যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গোষ্ঠীটি আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত শনিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি তেল আবিবের একটি পার্কে পতিত হয়। হুতির একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বন্দর, জ্বালানি অবকাঠামো ও হুতির সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক নৌপথ রক্ষার অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। এ ঘটনার জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এতে এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩১৭ জন নিহত হয়েছে। হামাস কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৮ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলেন, আল-মাওয়াসি এলাকায় তিনটি পৃথক হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে, যেটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ইসরায়েল অবশ্য বলেছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু করছে। গতকাল সোমবার ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে তাদের তিন সেনা নিহত হয়েছে।