সীমান্তে সেনা কমানোর পথে ভারত-পাকিস্তান

পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান চলতি মাসের সংঘর্ষের আগে সীমান্তে যে সেনা মোতায়েন করেছিল, এখন তা ক্রমে কমিয়ে আনার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “২২ এপ্রিলের আগের পরিস্থিতিতে আমরা প্রায় ফিরে এসেছি… বা এসে পড়েছি বলা যায়।”
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে দুই দেশ যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং কামান ব্যবহার করেছে। চারদিন স্থায়ী এই সংঘর্ষকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। পরে পারমাণবিক শক্তিধর দেশদুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরে এক হামলার মাধ্যমে, যেখানে ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানপন্থি “সন্ত্রাসীদের” দায়ী করে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে।
৭ মে ভারত সীমান্তের ওপারে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা করে। এরপর উভয় পক্ষই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল মির্জা বলেন, এই যুদ্ধ এবার শুধু কাশ্মীরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং উভয় দেশের মূল ভূখণ্ডেও হামলা হয়েছে, যদিও বড় ধরনের ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি কেউ। তিনি বলেন, “আগামীতে সংঘর্ষ হলে তা আর সীমিত থাকবে না। এটি পুরো ভারত ও পুরো পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।”
জেনারেল মির্জা জানান, এবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও, “কোনো ভুল হিসাব বা কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত” ভবিষ্যতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চেষ্টার ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ভারত এ বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকাকে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সব আলোচনাই হবে দ্বিপাক্ষিক।
জেনারেল মির্জা বলেন, “দুই দেশের মধ্যে যথাযথ সংকট ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ খুবই সীমিত, আর সে কারণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সংলাপের পক্ষে, তবে বর্তমানে শুধুমাত্র সেনা কমান্ডারদের মধ্যে একটি হটলাইন এবং সীমান্ত পর্যায়ে কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো কূটনৈতিক বা সামরিক সংলাপ নেই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যদি ভারত আক্রান্ত হয়, তবে আবারও সীমান্তের ওপারে ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলা চালানো হবে।
নতুন করে উত্তেজনা না থাকলেও, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।