বিলুপ্তির পথে ভারতের চার প্রজাতির পাখি

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর জন্য এক গভীর উদ্বেগের খবর জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। এর সর্বশেষ ‘রেড লিস্ট’ আপডেট অনুসারে, ভারতের চার প্রজাতির পাখি এখন বিলুপ্তির চরম ঝুঁকিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এক সময় যে পাখিগুলো ফসলি জমি, তৃণভূমি বা পাহাড়ি এলাকায় যাদের অবাধ বিচরণ ছিল, সেই পাখিগুলো পরিস্থিতির কারণে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই চারটি প্রজাতিই তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক বাসস্থান হারানোর ফলস্বরূপ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে, যা প্রকৃতির ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকা মানবিক চাপকেই তুলে ধরেছে।
বিলুপ্তির পথে যে চার প্রজাতির পাখি
১. ইন্ডিয়ান রোলার/নীলকণ্ঠ
ইন্ডিয়ান রোলার বা নীলকণ্ঠ ‘প্রায় হুমকির মুখে’ রয়েছে। এই পাখি সাধারণত ফসলি জমি ও খোলা প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার এবং কৃষিকে আরও নিবিড় করার ফলে এদের খাদ্যের উৎস ও প্রজনন ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

২. লং-বিল্ড গ্রাসফড়িং-ওয়ার্বলার
এই পাখিটি এখন সরাসরি ‘বিপন্ন’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হয়েছে। মূলত তৃণভূমি ও পাহাড়ি ঝোপঝাড়ে বাস করা এই প্রজাতিটি অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং কৃষিকাজের তীব্রতার কারণে তাদের প্রধান আবাসস্থল হারাচ্ছে। তাদের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকায় এই প্রজাতিটি বর্তমানে বিলুপ্তির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

৩. ইন্ডিয়ান কোর্সার
এই পাখিটিকে বর্তমানে ‘প্রায় হুমকির মুখে’ তালিকায় রাখা হয়েছে। উন্মুক্ত আধা-শুষ্ক ল্যান্ডস্কেপ ও মরুভূমি সদৃশ পরিবেশ এদের স্বাভাবিক বাসস্থান। কিন্তু দ্রুত নগরায়ণ ও পতিত জমিগুলো মানুষের দখলে চলে যাওয়ায় এরা নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র পাচ্ছে না। এই কারণে এদের জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।

৪. রুফাস-টেইলড লার্ক
এটিও ‘প্রায় হুমকির মুখে’ থাকা একটি প্রজাতি। তৃণভূমি এবং পতিত জমিতে বাস করা এই লার্ক প্রজাতিটি আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তার ও বনায়নের কারণে মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও আশার আলো
বিশ্বব্যাপী মোট ১১ হাজার ১৮৫টি পাখির প্রজাতির মধ্যে ১১ দশমিক ৫ শতাংশই বর্তমানে হুমকির মুখে। ২০১৬ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে যে পাখির জনসংখ্যা কমে আসছে, তার হার ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন কেটে ফেলা এবং কৃষি সম্প্রসারণকে বৈশ্বিকভাবে পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে, আশার কথা হলো ভারতের ১২টি পাখির প্রজাতির ওপর পুনরায় মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, আটটির সংরক্ষণের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ভারতজুড়ে পাখি পর্যবেক্ষকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে।