শীতকালীন ভারি বৃষ্টিতে গাজাবাসীর অবর্ণনীয় কষ্ট
গাজা শহরে একটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে এই মৌসুমের প্রথম বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের পর তাঁবুর সামনে জমা হয়ে পড়া পানি সরাচ্ছিলেন খালি পায়ে থাকা নিভেন আবু জ্রেইনা। বৃষ্টির পানিতে ভেজা হিজাবটি মুখের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অবস্থায় এই ফিলিস্তিনি নারী বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে তাঁবু ও আশপাশের এলাকাগুলোর জমা হওয়া পানি সরানোর জন্য সকাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি। এখানকার দৃশ্যই বলে দিচ্ছে সব কথা। বৃষ্টির পানিতে আমাদের সব কাপড় এমনকি তোষকটাও ভিজে গেছে।’
গতকাল শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, স্থানচ্যুত মানুষগুলো এখানকার কয়েক হাজার তাঁবুতে বাস করলেও ভারি বৃষ্টির কারণে সেগুলোতে পানি ঢুকছে।
আজ শনিবার বাসাল বলেন, ‘আজ ভোর থেকে আমরা শত শত সাহায্যের আবেদন গ্রহণ করেছি। এখানকার নাগরিকরা জানিয়েছেন, তাদের বাসযোগ্য তাঁবুগুলো বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও সবার জন্য প্রয়োজনীয় তাঁবু এখানে নেই।’
একপাশে সিনাই ও নেগেভ মরুভূমি এবং অন্যপাশে ভূমধ্যসাগর আর মাঝখানে ছোট্ট গাজা উপত্যকায় শরতের শেষ ভাগে ও শীতকালে বেশি বৃষ্টি হয়। তবে মানবিক পণ্য সরবরাহে ইসরায়েলের বিধিনিষেধের কারণে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী যেসব অস্থায়ী আবাসস্থল ও তাঁবুতে বসবাস করছে তা সেই ভারি বৃষ্টিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়।
গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির ফলে বিধিনিষেধ কিছুটা উঠে গেলেও যে হারে সাহায্যপণ্য গাজায় প্রবেশ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে যুদ্ধে গাজার ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা, যা দেখলেন বিবিসির সাংবাদিক
আশ্রয়স্থলে মাথা গোজার ঠাঁই তৈরির জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা এখনও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় আসতে পারছে না। ধরা যাক, একটি তাঁবু স্থাপনের জন্য যে ‘টেন্ট পোল’ দরকার হয়, তার সরবরাহের অনুমতি দিচ্ছে না ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
আজকের ভারি বৃষ্টিতে গাজার নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমাট বেঁধে আছে। বৃষ্টির পানি সাগরে মিশে যাওয়ার আগে অনেক জায়গায় গোড়ালি সমান পানিতে শিশুরা হাঁটাচলা করছিল।
বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইনাম আল-বাট্রিখি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘যখন নারীরা আমারে কাছে সাহায্য পেতে আসেন নিজেকে আমার ক্ষমতাহীন বলে মনে হয়। এই অবস্থায় আমি কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি?’ তিনি জানান, বৃষ্টিতে তার নিজের তাঁবুতেও পানি উঠেছে।
নুরা আবু এল-কাশ নামের আরেকজন বাস্তুচ্যুত নারী জানান, শনিবারের বৃষ্টিতে তার তোষক, কম্বল ও কাপড়চোপড় সব ভিজে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে এখানে থাকতে বলেছে, তবে এই স্থানটি আমাদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারছে না। আমার এখন কী করা উচিত?’
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বাহিনী শিগগিরই গাজায় প্রবেশ করবে : ট্রাম্প
গাজা উপত্যকায় এখন রাতের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করে। তবে প্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থল ও পুষ্টির অভাবে থাকা গাজাবাসীর জন্য তাপমাত্রার কিছুটা পরিবর্তনও অবর্ণনীয় কষ্ট নিয়ে আসে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক