হলিউড
ছিলেন খেলোয়াড়, হলেন অভিনেতা
হলিউডি সিনেমায় দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেলেও এমন অনেক তারকা রয়েছেন, যাঁদের সীমারেখা শুধু সিনেমায় আটকে নেই। অভিনয়ের বাইরেও যাঁদের প্রতিভা বহুদূর। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার থেকে শুরু করে চাক নোরিস কিংবা ডোয়াইন জনসন—তাঁদের কেউই হলিউডের কল্যাণে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেননি, বরং হলিউডে প্রবেশই করেছেন তারকা খ্যাতি নিয়ে।
অভিনেতা হয়ে ওঠার আগেই অনেক হলিউড তারকা কাঁপিয়ে এসেছেন খেলার মাঠ কিংবা বক্সিং রিং, কারো কারো ‘অভিনেতা’ খ্যাতি এখনো ছাড়িয়ে যেতে পারেনি তাঁদের ‘খেলোয়াড়ি’ খ্যাতিকে। সিনেমায় অভিনয় দিয়ে দর্শক মাতানোর আগে নিজেদের খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য দিয়ে ক্রীড়াঙ্গন কাঁপানো এ রকম কয়েকজন হলিউড তারকাকে নিয়ে থাকছে এই আয়োজনে।
ডোয়াইন ‘দ্য রক’ জনসন
ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি দলের হয়ে খেলেছেন ফুটবল, খেলেছেন কানাডিয়ান ফুটবল লিগে ও ‘ক্যালগারি স্ট্যাম্পেডার্স’ দলের হয়ে। তার পর ক্যারিয়ারের গতিপথ পাল্টে হয়ে উঠলেন ‘ডব্লিউডব্লিউই’র ‘প্রো-রেসলার’। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে অত্যন্ত সফল ‘দ্য রক’ এর পর পা রাখলেন হলিউডের রুপালি পর্দার দুনিয়ায় এবং স্বভাবতই সেখানেও রেখে যাচ্ছেন নিখুঁত সাফল্যের ছাপ। ‘দ্য মমি রিটার্নস’ দিয়ে হলিউড যাত্রা শুরু করা এই অভিনেতা এরপর অভিনয় করেন ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’-এ। হালের হলিউড অ্যাকশন সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ, বর্তমানে হলিউডের সবচেয়ে দামি এই অভিনেতা অভিনয় করেছেন ‘দ্য টুথ ফেয়ারি’ এবং ‘দ্য গেইম প্ল্যান’-এর মতো শিশুতোষ সিনেমাগুলোতেও।
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার
সাবেক এই পেশাদার ‘বডিবিল্ডার’ তাঁর হলিউড শুরু করেন ১৯৭০ সালে ‘হারকিউলিস ইন নিউইয়র্ক’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে, যেখানে তাঁর নাম দেখানো হয় আর্নল্ড স্ট্রং। ১৯৮২ সালের ‘কোনান দ্য বার্বারিয়ান’-এর মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান এবং হয়ে ওঠেন নিয়মিত হলিউড তারকা। শুধু খেলোয়াড় কিংবা অভিনেতা পরিচয়ের বাইরেও রাজনৈতিক জীবনেও ব্যাপক সফল এই তারকা দায়িত্ব পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে।
ওজি সিম্পসন
‘টাওয়ারিং ইনফার্নো’ সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেতা একসময় ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। তাঁর স্বল্পস্থায়ী হলিউড ক্যারিয়ারের অন্যতম অর্জন ‘ন্যাকেড গান’ ট্রিলোজিতে লেসলি নিলসেনের বিপরীতে অফিসার নর্ডবার্গ চরিত্রে অভিনয়। সম্ভাবনাময় এই অভিনেতা একসময় জড়িয়ে পড়েন হত্যা, অপহরণ এবং ডাকাতির মতো ভয়ানক অপরাধে। ‘দ্য পিপল ভার্সেস ওজি সিম্পসন’ আমেরিকার ইতিহাসের আলোচিত মামলাগুলোর একটি, যার কেন্দ্রে রয়েছেন এই অভিনেতাই। যার ফল হিসেবে সিম্পসন এখনো আছেন জেলে, খাটছেন ৩৩ বছরের সাজা।
টেরি ব্র্যাডশ
১৯৭৮ সালের সিনেমা ‘হুপার’ দিয়ে হলিউডে আগমন ব্র্যাডশর। অভিনয় করেন ১৯৮১-এর ‘দ্য ক্যানোনবল রান’ এবং ২০০৬-এর ম্যাথিও ম্যাককনি-সারাহ জেসিকা পার্কার রোমান্টিক কমেডি ‘ফেইলার টু লাঞ্চ’-এ। হলিউডের বর্ণিল জীবনের আগে টেরি ব্র্যাডশ ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। খেলেছেন ‘এনএফএল’-এর মতো মর্যাদাকর ফুটবল লিগে। ২০০১ সালে ইতিহাসের সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ‘এনএফএল’ খেলোয়াড় হিসেবে হলিউডের ‘ওয়াক অব ফেইম’-এ হাঁটেন ব্র্যাডশ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই অভিনেতা একই সঙ্গে একজন সংগীতশিল্পীও, রেকর্ড করেছেন বেশ কটি ‘কান্ট্রি’ আর ‘গসপেল’ অ্যালবামও। এ ছাড়া কাজ করেছেন ফক্সের ‘এনএফএল’ ফুটবল বিশ্লেষক এবং সহসঞ্চালক হিসেবেও।
ফ্রেড উইলিয়ামসন
পেশাদার ফুটবল খেলার সময় পরিচিত ছিলেন ‘দ্য হ্যামার’ নামে। ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন’-এর এই অ্যালামনাই ‘ডায়াহ্যান করোল’-এর চরিত্রে অভিনয় করেন ‘জুলিয়া’ সিনেমায়। ‘টাফ গাইজ’, ‘থ্রি দ্য হার্ড ওয়ে’ এবং ‘দ্যাট ম্যান বোল্ট’-এর মতো তুমুল ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করার পর হলিউডকেই নিজের পরবর্তী পেশা হিসেবে নিয়ে নেন উইলিয়ামসন, প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
উইলিয়ামসনের অন্য অনেক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০৪-এর ‘স্টার্স্কি অ্যান্ড হাচ’, রবার্ট রড্রিগেজের ‘ফ্রম ডাস্ক টিল ডন’ এবং ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’।
লরেন্স টেইলর
‘লাইন ব্যাকার’ হিসেবে নিজের পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের পুরোটায় ‘নিউইয়র্ক জায়ান্টস’-এর সঙ্গে খেলেন লরেন্স ‘এল টি’ টেইলর। খেলার মাঠে তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য টেইলরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম সেরাদের একজন হিসেবে। যদিও মাত্রাতিরক্ত অ্যালকোহল পান আর নেশাজনিত বেশ কিছু দুর্ঘটনার কারণে কিছুটা ফিকে হয়ে যায় তাঁর যাবতীয় অর্জন।
সিনেমায় তাঁর প্রথম অভিনয় অলিভার স্টোনের ‘অ্যানি গিভেন সানডে’ তে। পরে ২০০৩ সালে জ্যঁ-ক্লদ ভ্যান ড্যামের সঙ্গে ‘ইন হেল’ ছাড়া টেইলর অভিনয় করেন ‘দ্য সোপরানোস’ এবং অ্যাডাম স্যান্ডলারের ফুটবল ফ্লিক ‘দ্য ওয়াটার বয়’-এ।
আন্দ্রে দ্য জায়ান্ট
‘কোনান দ্য ডেস্ট্রয়ার’, ‘মিকি প্লাস মড’ এবং ‘দ্য প্রিন্সেস ব্রাইড’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া অভিনেতা ‘দ্য জায়ান্ট’ নামে পরিচিত আন্দ্রে ছিলেন একজন পেশাদার রেসলার। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আন্দ্রে, যার সঙ্গেই সমাপ্ত হয়ে যায় সম্ভাবনাময় এই অভিনেতার ক্যারিয়ার।
চাক নোরিস
‘দ্য ডেল্টা ফোর্স’, ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’, ‘দ্য ওয়ে অব দ্য ড্রাগন’, ‘ফায়ারওয়াকার’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করা চাক নোরিস একজন পেশাদার মার্শাল আর্ট তারকা। মার্শাল আর্ট ছাড়াও আত্মরক্ষার অন্যান্য প্রচলিত ক্ষেত্রের প্রায় সবকটিতেই আছে তাঁর অবাধ বিচরণ এবং লম্বা অর্জনের তালিকা।
সিনেমার বাইরে টেলিভিশনেও সরব উপস্থিতি ছিল এই অভিনেতার। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ পর্যন্ত চলা সিবিএসের ‘ওয়াকার’ আর ‘টেক্সাস রেঞ্জার’-এ অভিনয় করেছিলেন নোরিস।